শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৩

ফারুকের সুখের সংসার থেমে গেলো তান্ডবে

সুজন ঘোষ,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চট্টগ্রাম: দু’টি ফুটফুটে শিশু নিয়ে ফারুক ইকবাল বিপুল (৩২) ও সানজিদা আফরিন নিশুর ভালবাসার ছোট্ট সংসার। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও সুখের কমতি ছিল না সে সংসারে। তবে জামায়াতে  ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের তান্ডবে সে সুখের স্থায়িত্ব চিরদিনের জন্য থেমে গেল বৃহস্পতিবার।
জামায়াত-হেফাজতের তান্ডবে একই অবস্থা মোহাম্মদ ফোরকান আর মোহাম্মদ রুবেলের পরিবারেও। প্রিয় সন্তানদের হারিয়ে পাগলপ্রায় এই দুই পরিবারের লোকজন।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার কাজিরহাট এলাকায় মসজিদ ও মাদ্রাসার মাইক দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে জায়ায়াতে ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা নৃশংসভাবে খুন করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এ তিন নেতাকর্মীকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফটিকছড়ির সংসদীয় আসনের প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি হরতাল বিরোধী মিছিল বের করে।
মিছিলটি ভূজপুর থানার ওই এলাকা দিয়ে ফিরে আসার সময় হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা স্থানীয় জনতাদের সঙ্গে তাদের উপর দা-কুড়াল-কিরিচ নিয়ে হামলা চালায়।
প্রায় সাত বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বদেশে ফিরে আসেন ফারুক ইকবাল। নগরীর হাজী পাড়ায় বাসা ভাড়া নেন তিনি। আত্মীয়তার সূত্রে নগরীর চন্দনপুরার মনু মির্জা লেইন এলাকার বাসিন্দা নিশুর সঙ্গে পরিচয়। সে পরিচয় থেকে পরিণয়। তাদের বিয়ের উকিল মা ছিলেন শাহিদা পারভীন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে শাহিদা পারভীন ও আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে বাতাস।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহিদা পারভীন বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার দিন সকালেই ভাত না খেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান ফারুক। নিশু ভাত খেয়ে যাওয়ার জন্য খুব জোর করেছিল।
তিনি বলেন, ‘‘বড় ছেলে নাহিয়ান তার আব্বুকে বাইরে যেতে নিষেধও করেছিল। বলেছিল, আব্বু যেও না”
কারো কথা না শুনে বিপুল চলে গেলেন পৃথিবীর ওপারে। রেখে গেলেন হেফাজত আর জামায়াতের ইসলামের বর্বরতার ইতিহাস।
স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফারুক ইকবাল বিপুল। সর্বশেষ তিনি ছিলেন ভক্তপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
বিপুলের মামাতো ভাই আকতার উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিরস্ত্র মানুষদের উপর সশস্ত্র হামলা। এটা কোন ধরণের রাজনীতি?’
ফটিকছড়ি উপজেলার ভক্তপুর ইউনিয়নের মৃত মফিজউদ্দিনের সাত সন্তানের মধ্যে পঞ্চম সন্তান হচ্ছেন ফারুক ইকবাল বিপুল। বিপুল ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
তার দু’সন্তান নাহিয়ান বিন ইকবালের বয়স পাঁচ বছর এবং ছোট ছেলে রাইয়ান বিন ইকবালের বয়স মাত্র দুই বছর।
এদিকে হাসপাতালের মর্গে দেখা হয় মোহাম্মদ রুবেলের মামা মোহাম্মদ আনোয়ার পাশার সঙ্গে। ক্ষোভ মিশ্রিত কণ্ঠে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘মসজিদ ও মাদ্রাসার মতো পবিত্র স্থানের মাইক দিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিলে যারা হামলা করেছে, তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। তারা বর্বর ও জানোয়ার।’
ভাগ্নে খুনের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। মোহাম্মদ রুবেল ভক্তপুর ইউনিয়নের তৌহিদুল আলম ও শামসুন্নাহারের ছোট ছেলে।
ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ ফোরকানের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ির জাফদনগর বলে জানা গেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন