শহীদুল ইসলাম
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
সম্প্রতি দেশজুড়ে জামায়াতি তাণ্ডবের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের তথ্য তুলে ধরে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে নিরাপত্তার ‘অঙ্গীকার’ চেয়েছেন ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের নেতারা।
তাদের আশঙ্কা, আগামী নির্বাচন পর্ন্ত এই হামলা-তাণ্ডব অব্যহত থাকতে পারে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
সম্প্রতি দেশজুড়ে জামায়াতি তাণ্ডবের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের তথ্য তুলে ধরে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে নিরাপত্তার ‘অঙ্গীকার’ চেয়েছেন ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের নেতারা।
তাদের আশঙ্কা, আগামী নির্বাচন পর্ন্ত এই হামলা-তাণ্ডব অব্যহত থাকতে পারে।
গত মাসে যুদ্ধাপরাধের মামলায় দুই জামায়াত নেতার যাবজ্জীবন ও ফাঁসির রায় আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির। আক্রান্ত হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি মন্দিরও।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাবে এই সময়ে দেশের ৩৭ জেলায় ৪৭টি মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে পাঁচ জনকে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হামলার ঘটনার পর গত ১ মার্চ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে স্থাপিত মনিটরিং সেলে ক্ষয়ক্ষতির এই পরিসংখ্যান করা হয়েছে।
অবশ্য বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের হিসাব অনুযায়ী ৯৯টি মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি মন্দিরে ভাংচুর-লুটপাট চালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দুই হাজারের মতো ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।”
হামলা-নিপীড়নের এই ধারা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, “মন্দির পোড়ানো, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে যেন নোংরা রাজনীতি না হয়। শীর্ষ রাজনীতিবীদরা যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে তারা সংঘাত-সংঘর্ষকে আরো উস্কে দিচ্ছেন।”
“বিএনপি-জামায়াত বলছে তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেনি, এরশাদও বলছেন ‘না’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে প্রশ্নই আসে না। তাহলে আক্রমণটা করল কে”, প্রশ্ন রাখেন কাজল।
তিনি বলেন, রাজনীতিবীদরা তাদের পাশে দাঁড়াক- এটাই তারা চান। কাজের মধ্য দিয়েই তারা প্রমাণ করুক যে তারা রাজনীতিবিদ, অপরাধী নন।
“উনারা রাজনীতি করুক কিন্তু আমরা যেন গিনিপিগ না হই। মায়াকান্নার কোনো মানে হয় না।”
এসব হামলার ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জামায়াতের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তবে জামায়াতের প্রধান শরিক বিএনপি বলছে, সরকারের লোকেরাই হামলা চালিয়ে দোষ চাপাচ্ছে।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর আদম শুমারির তথ্য তুলে ধরে কাজল বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশের মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ১৯৭১ সালে ২১ শতাংশই হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হলেও ২০১২ সালে তা ৯ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
“বাড়িতে-মন্দিরে আগুন দেয়ার মূল উদ্দেশ্যে হলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভূমি দখল করা। ১৯৪৭ থেকে এই দখলের সংস্কৃতি শুরু হয়েছে”, বলেন কাজল।
তার আশঙ্কা, এই ধারা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক শতাংশে নেমে আসবে।
“তখনতো ধর্মীয় সংখ্যাগুরুরা নিজেরাই কাটাকাটি করবে। কারণ সম্পত্তি গ্রাসের সংস্কৃতি শুরু হলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়।”
‘সংখ্যালঘু’ হিসাবে রাজনীতিবীদদের কাছে ‘বিশেষ’ কোনো সুবিধা চান না উল্লেখ করে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, “নামের কারণে যেন আমাদের আর কোনো অসুবিধা না হয়, আমরা শুধু সেই নিশ্চয়তাটুকু তাদের কাছে চাই।”
দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তাণ্ডবের চিত্র তুলে ধরে রানা দাসগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি এটাই শেষ হতো, তাহলে শান্তি পেতাম। কিন্তু এটা তো শেষ না। যুদ্ধাপরাধীদের আরো রায় ঘোষণা হবে। নির্বাচনের আগে-পরে টার্গেট নিয়ে এসব ঘটানো হচ্ছে।”
এই হামলা প্রতিরোধে সরকার, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলো যদি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়, জনগণ যদি সম্মিলিতভাবে তাণ্ডব প্রতিরোধ করে, তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ওপর হামলা ‘কিছুটা’ হলেও কমবে বলে মনে করেন রানা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, মনিটরিং সেলের তথ্যগুলো শিগগিরই প্রতিবেদন আকারে প্রশাসন, সরকার ও বিদেশি সংস্থগুলোকে পাঠাবেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সরকার যে সহায়তা দিয়েছে- তা সন্তোষজনক নয় বলেও তিনি দাবি করেন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চৌধুরী বলেন, একাত্তরের পুরো দেশ ছারখার করেছিল তখনকার পাকিস্তান সরকার, ‘৮৮-’৯০ পর্ন্ত এরশাদের সরকার, ১৯৯২ ও ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার। ইতিহাস বলছে, সরকারি দল আগে সব সময়ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনে যুক্ত ছিল।
“আমরা বিশ্বাস করতে চাই না যে ২০১৩ সালের হামলার সঙ্গেও আওয়ামী লীগ বা তাদের সরকার যুক্ত আছে। তবে তারা আমাদের ন্যায় বিচারের ব্যবস্থাও করতে পারছেন না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার পর মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ও প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন