জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে জাতীয়
স্মৃতিসৌধের উন্মুক্ত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও
পরিপালন করার অঙ্গীকার করেছেন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ শ্রদ্ধা
জানাতে আসা হাজার হাজার মানুষ। বেলা ১২টায় উন্মুক্ত মঞ্চে এই শপথবাক্য পাঠ
করান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। জাতীয়
স্মৃতিসৌধের উন্মুক্ত মঞ্চে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের জনসাধারণের
শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মহান
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচী পালন করেছে। শপথবাক্যে বলা হয়, যেসব
মহান আদর্শ এ দেশের ৩০ লাখ শহীদদের মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গ
করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল আমৃত্যু তা ধারণ ও পরিপালন করার অঙ্গীকার করছি।
আমাদের স্বপ্নে, চিন্তায়, বাক্যে ও কর্মে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতি
নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ করব এবং প্রতিনিয়ত দেশের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত
রাখব।
শপথে আরও বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের অসম্পূর্ণ কাজ যথা- সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, জামায়াতসহ সকল সংগঠন যারা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের নিষিদ্ধ করা এবং একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক এবং বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাব। শপথবাক্যে জামায়াত ও তাদের মিত্রদের সকল ষড়যন্ত্র দৃঢ় হাতে মোকাবেলা করে তা ব্যর্থ করে দেয়ারও অঙ্গীকার করা হয়।
এর আগে সমাবেশে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সেøাগানকন্যা বলে পরিচিত লাকী আক্তার বলেন, আমরা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলাম, এখন সে আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর, জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং এদের তা-বের বিচারের দাবিতে আমরা সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন অবিরাম চালিয়ে যাব। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন পরিচালনা করতে চাই। তিনি সকলকে আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
জাবি স্কুল ও কলেজের ছাত্রী মৌটুসি বলেন, আমরা জানি যুদ্ধাপরাধীরা কি পরিমাণ খারাপ। ওরা এদেশের মা-বোনদের পাকিস্তানী নরপশুদের হাতে তুলে দিয়েছিল। হত্যা করেছিল নির্বিচারে। তিনি বলেন, ৭১-এ শহীদ হওয়া ৩০ লাখ মানুষের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার আহ্বায়ক মৈত্রী বর্মণ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃথা যেতে পারে না। সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা বুকের রক্ত দিয়ে দেশ শত্রুমুক্ত করেছিল। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সেই আদর্শ ধারণ করে যে দ্বিতীয় যুদ্ধে নেমেছে তা সফল হবেই। তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াত-শিবিরকে এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। আর এখন তাদের রক্ষা করতে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের কাছে কোন ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না।
এর আগে বেলা এগারোটায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের উন্মুক্ত মঞ্চে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের জনসাধারণের এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ মহাসমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাভার অঞ্চলের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবী, শ্রমিক, জনতা অংশগ্রহণ করে।
জনকণ্ঠ, সাভার প্রতিনিধি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন