জনকণ্ঠ, স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র ইসলামকে বিকৃত করে জামায়াত-শিবিরের অপকর্মের
বিরুদ্ধে ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতার ডাকা আগামীকালের মহাসমাবেশ বানচালে
মরিয়া হয়ে উঠেছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। দেশব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি আঁচ
করতে পেরে মহাসমাবেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে জামায়াত-শিবিরসহ
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও তাদের দোসররা। তবে সকল অপতৎপরতা মোকাবেলা করে
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ইসলামের পবিত্রতা রক্ষা, সতিকারের নাস্তিকদের বিচার ও
জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এ মহাসমাবেশ সফল করতে
চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
বেলা ১১টায় শুরু এ মহাসমাবেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি
মরহুম মোঃ জিল্লুর রহমানের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হবে। ওলামা-মাশায়েখগণ
যেকোন মূল্যে মহাসমাবেশ সফল করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঐতিহাসিক শোলাকিয়া
ঈদগার ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মদ্রোহীদের অপপ্রচারের জবাব দিয়ে মহাসমাবেশ সফল করতে রাজধানীতে বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদের প্রস্তুতি সভায় এ ঘোষণা দেয়া হয়। শাপলা চত্বরের এ মহাসমাবেশকে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যবিধানকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশের বিশিষ্ট এ ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, ২৩ তারিখ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণীত হবে। মিথ্যার ধ্বজাধারীরা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে আর বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির এখন মাননীয় রাষ্ট্রপতির ইন্তেকালে মহাসমাবেশ স্থগিত হয়েছে মিথ্যা প্রচারণায় মেতে উঠেছে। তিনি এসব মিথ্যাচারে ওলামা-মাশায়েখ এবং তৌহিদী জনতাকে কান না দেয়ার আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় ওলামা-মাশায়েখগণ যেকোন মূল্যে মহাসমাবেশ সফল করার অঙ্গীকার করেন। তারা বলেন, কিছু বিভ্রান্তকারী ও যুদ্ধাপরাধীর দালাল সমাবেশ বানচাল করার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এসব পদলেহী বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী দালালদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তাঁরা বলেন, এ দেশের ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতা কোন আইওয়াশকে পরওয়া করে না। ‘জামায়াতে ইসলাম ইসলাম নয়, জামায়াতে ইসলামী ইসলামী দল নয়, নাস্তিক-মুরতাদদের এ দেশে ঠাঁই নেই’-এসব সেøাাগান নিয়ে লাখো জনতা মহাসমাবেশে যোগদান করবেন ইনশাল্লাহ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মুফতি মুহাম্মদ আলী, মুফতি তাজুল ইসলাম, মুফতি ফারুক হুসাইন, মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান, মুফতি ইদ্রিস, মুফতি আইনুল ইসলাম কান্ধলবী, মুফতি শফিক রহমান, মুফতি আবদুর রহীম, মুফতি জামিল আহমদ ইউসুফসহ শতাধিক ওলামা-মাশায়েখ। তারা জানিয়েছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম মোঃ জিল্লুর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মহাসমাবশে বিশেষ মোনাজাতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। জানা গেছে, মহাসমাবেশ সফল করতে দেশব্যাপী চলছে মতবিনিময় সভা। সংগঠনের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা কমিটি মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। মতবিনিময় করছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে। মহাসমাবেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে মওদুদীর বিতর্কিক ও বিকৃত মতের বিরোধী প্রায় সকল ইসলামী দল ও সংগঠন। ইতোমধ্যেই জামায়াত-শিবিরকে ইসলামবিরোধী শক্তি অভিহিত করে মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদরা। এর আগে গত ১৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে একাত্তরের ন্যায় ইসলামের নামে জামায়াত-শিবিরের তা-বসহ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ। ঘোষণা অনুসারে আগামীকাল বেলা ১১টায় মতিঝিলের শাপলাচত্বরে শুরু হবে মহাসমাবেশ।
পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগার ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ইতোমধ্যেই ওলামা-মাশায়েখ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ৭১’-এর মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের বিশিষ্ট এ ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধ জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ। রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো, এদের বিচার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমরা ধর্মদ্রোহী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের মুখোশ উন্মোচনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছি। জামায়াত জন্ম থেকে ইসলামেরও শত্রু। এরা দেশে ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আমদানি করেছে। সুতরাং ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ রুখতে হলে জামায়াতের উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং এদের অর্থের উৎসগুলো বাজেয়াপ্ত করতে হবে। আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘মুরতাদ নাস্তিকদের স্থান বাংলাদেশে নাই, এদের বরদাস্ত করা হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, এবার তাদের রক্ষা নাই।’ তবে মুরতাদ নাস্তিক বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে? এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আবারও বলেছেন, যারা নিজেদের আল্লাহর বিরুদ্ধে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে তারাই নাস্তিক, যারাই ইসলাম নিয়ে কুৎসা প্রচার করে তারা সবাই মুরতাদ, এক কথায় যারা ধর্ম মানে না। কে বা কারা ব্লগে ইসলাম ও নবীকে নিয়ে কুৎসা রচনা করেছে তার হিসেব নেই। একজন দুজনের ব্যক্তিগত ব্লগের কথা নিয়ে সকল ব্লগারের ওপর চাপিয়ে দেয়া অপরাধ। এদিকে এই মহাসমাবেশ ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছিল এটা বানচালের পাঁয়তারা। ইতোমধ্যে জামায়াত ও বিএনপির মদদপুষ্ট কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী নামে বেনামে বিকৃত তথ্য প্রচার শুরু করেছে। ফেসবুক এমনকি স্বাধীনতাবিরোধীদের মুখপত্র হয়ে ওঠা একটি গণমাধ্যম ওলামা মাশায়েখদের মহাসমাবেশকে রীতিমতো নাস্তিকদের কাজ বলে ঔদ্ধত্য দেখানো শুরু করেছে। কেবল তাই নয়, স্বাধীনতাবিরোধী এ চক্র খোদ আল্লামা ফরীদ উদ্দিন মাসউদকে নাস্তিক বলার মতো ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারের সভায় স্বাধীনতাবিরোধীদের এ অপতৎপরতার জবাব দিয়ে তিনি বলেছেন, জামায়াত একাত্তরেও আমার বিরুদ্ধে লেগেছিল। আমাকে নাস্তিক, মুরতাদ বলেছিল। কিন্তু এতে ফায়দা হয়নি। এবারও হবে না। এরা ইসলামকে বিকৃত করে পবিত্র ইসলামকে অপমান করছে। তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি, যারা আমার বিরুদ্ধে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন তারা আগেই কাউকে শাস্তি না দিয়ে আমাদের মহাসমাবেশে এসে দেখুন সেখানে কি বলি। সেখানে কি কথা হয় তা আগে দেখুন। এদিকে এই মহাসমাবেশ ও গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নিয়ে অভিযোগের পাল্লা ভারি হচ্ছে। জানা গেছে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনকেই পেছন থেকে এখন ঢাল হিসেবে কাজে লাগাতে চায় জামায়াত-শিবির। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কর্মসূচী দিয়ে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটি। অন্যদিকে সমমনা ইসলামী দলগুলোর হরতাল এবং হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকে সামনে রেখে আবারও সক্রিয় হচ্ছেন নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি জঙ্গীবাদের দায়ে অভিযুক্ত মুফতি ইজহারুল ইসলাম। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছিল র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর চার মাস কারাবাস শেষে ইজহার জামিনে মুক্তি পান। এর পর থেকে তিনি দীর্ঘদিন নিশ্চুপ ছিলেন। তবে সম্প্রতি সমমনা ইসলামী দলগুলোর হরতাল এবং হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে তিনি আবার সক্রিয় হয়েছেন। একই ব্যানারে সক্রিয় জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট এ নেতার ছেলে মুফতি হারুন বিন ইজহান। যতিও তারা ইতোমধ্যেই পিঠ বাঁচাতে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আন্দোলন করছি না। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। হেফাজতে ইসলাম আমাদের কাছ থেকে ছাত্র চেয়েছে, তাই আমরা সহযোগিতা করেছি।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন