শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৩

নানা ব্যানারে উগ্রপন্থী ধর্মান্ধদের মাঠে নামাচ্ছে জামায়াত

জনকণ্ঠ । শংকর কুমার দে
দেশের বিভিন্নস্থানে ‘হেফাজতে ইসলাম’ ‘মুফাসিরিন উলামায়ে কেরাম’, ‘পীর মাশায়েখ ও জনতার মঞ্চ’, ‘আলেম মাশায়েখ’ সহ উগ্রপন্থী ধর্মান্ধ দলগুলোকে নানা নামের ব্যানারে মাঠে নামাচ্ছে জামায়াত-শিবির। ধর্ম রক্ষার ধুয়া তুলে গণজাগরণ মঞ্চের গণজোয়ার ঠেকানোর আড়ালে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে তাদের এটা নতুন কৌশল। তারা উগ্রপন্থী ধর্মান্ধ দলগুলোর নেতাদের মধ্যে বিরাট অঙ্কের টাকা ছড়িয়ে হাত করে তাদের মাঠে নামানোর কৌশল নিয়েছে। চট্টগ্রামের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে এই কৌশল বাস্তবায়নের নেপথ্যে কাজ করেছে জামায়াত-শিবির। পুলিশের উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তারা ’৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের কুকীর্তি তুলে ধরার কারণে ঘৃণাভরা নামে পরিণত হয়েছে জামায়াত-শিবির। গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তাদের ‘তুই রাজাকার’ জ্বালাময়ী সেøাগানের ফলে তাদের কুকর্ম জেনে গেছে এই নতুন প্রজন্ম। জনমত তাদের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় তারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে সশস্র সন্ত্রাসী তা-বলীলা চালানোর মতো জঘন্য অপরাধ কর্মকা- বেছে নিয়েছে। এতেও যখন তাদের শেষ রক্ষা হচ্ছে না তখন তারা উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দলগুলোর মধ্যে বিরাট অঙ্কের টাকা ছাড়িয়ে ধর্ম রক্ষার নামে মাঠে নামাচ্ছে।

রাজধানী ঢাকাসহ নতুন প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জামায়াতÑশিবিরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠার পর আলেম মাশায়েখদের নাম ও ধর্ম বিক্রি করে বাঁচার জন্য নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে জামায়াতÑশিবির। চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ধর্মের শত্রু আখ্যায়িত করে নানা ধরনের ফতোয়া দেয়ানোর পেছনেও তারাই কাজ করেছে। আলেম মাশায়েখ নামের ব্যানারে আন্দোলন গড়ে তুলতে কর্মসূচী ঘোষণা করা হচ্ছে। এভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষজনকে সহজে বিভ্রান্ত করে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়নো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই এই ধরনের নামের ব্যানারে কর্মসূচী ঘোষণার ব্যাপারে প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠানো হচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে নাকি আলেম মাশায়েখদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জামায়াতÑশিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা সংবাদ মাধ্যমে আলেম মাশায়েখ নাম ব্যাবহার করে তাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ এনে খবরও ছাপানো হচ্ছে।

ইসলামী সমমনা ১২ দলের ব্যানারে জামায়াত-শিবির জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন, ভাংচুর, সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর মধ্য দিয়ে তাদের নতুন কৌশলের কথা জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামায়াতÑশিবিরের সশস্র সন্ত্রাসী তা-বলীলা চালানোর কারণে ইসলামী সমমনা ১২ দলের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দেয়। এই পর্যায়ে ইসলামী সমমনা ১২ দল ক্ষুব্ধ হয়ে জামায়াতÑশিবিরের কর্মসূচীতে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করে। বিএনপি প্রথম দিকে জামায়াতÑশিবিরে সহিংসতার সঙ্গে নেই বলে জানালেও এখন তাদের প্রকাশ্যেই সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপির সমর্থন পাওয়ার পর জামায়াত-শিবির এখন আবারও উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দলগুলোর নেতাদের মধ্যে বিরাট অঙ্কের টাকা দিয়ে হাত করে নানা নামের ব্যানারে মাঠে নামাতে শুরু করেছে। চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে হেফজাতে ইসলাম নামের এক দলের ব্যানারে মাঠে নামানোর পেছনে জামায়াত-শিবিরই কলকাঠি নেড়েছে বলে পুলিশের তদন্তে পাওয়া গেছে।

যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য সংসদে আইন পাসসহ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিত্ব। সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে তখনই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য ‘হেফাজতে ইসলাম’ ‘মুফাসিরিন উলামায়ে কেরাম’, পীর মাশায়েখ ও জনতার মঞ্চ, আলেম-মাশায়েখ ইত্যাদি নামের ব্যানারে মাঠে নামছে জামায়াতÑশিবির। চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম নামের ব্যানারে মাঠে নামানোর বিষয়টি জামায়াত-শিবিরের টেস্ট কাজ বলে মনে করা হচ্ছে। এটা সফল হলে দেশের বিভিন্নস্থানে হেফাজতে ইসলাম নামের মতোই বিভিন্ন ধর্মীয় নামের ব্যানারে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধদের মাঠে নামানো হতে পারে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশের এক কর্মকর্তা দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, ধর্মের নামে রাজনীতি করে চোরাগোপ্তা হামলা, ঝটিকা মিছিল করে পুলিশের ওপর আক্রমণ, গাড়িতে আগুন, ভাংচুর, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে মানুষজনের আস্থা হারিয়ে ঘৃনিত হয়ে পড়েছে জামায়াতÑশিবির। এই ঘৃণাকে ক্ষোভে পরিণত করেছে শাহবাগের নতুন প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণের মঞ্চের তারুণ্য। এজন্য যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ‘হেফাজতে ইসলাম’ ‘মুফাসিরিন উলামায়ে কেরাম, ‘পীর মাশায়েখ ও জনতার মঞ্চ’ ও আলেম-মাশায়েখ নামের ব্যানারে মাঠে নামানো হচ্ছে। চট্টগ্রামের ঘটনা তারই উদাহরণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন