শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৩

জয় নিয়েই ঘরে ফিরব

সিদ্দিক আহমেদ
আজ থেকে ৪২ বছর আগে ইতিহাসের যে অধ্যায়ের সমাপ্তি হওয়ার কথা, সেই ৪২ বছরের পুরনো পাপ মোচনে তরুণদের নামতে হয়েছে রাজপথে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ৪২ বছর আগের পাপীদের শাস্তি না দিয়ে উল্টো সহায়তা করা হয়েছে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। এখনও সেই ধারা আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বচক্ষে।
যাদের দায়িত্ব পালনের কথা তারা করেনি বলেই সাড়ে তিনশ' খুনের প্রমাণ হওয়ার পর খুনির কপালে প্রতিটি খুনের জন্য ১৩ দিনের সাজা হয়। তাই আমাদের এগিয়ে আসতে হয়েছে। দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। আর কাঁধে তুলে নেওয়া দায়িত্বে আমরা অবহেলা করতে পারিনি। রাজপথে আমরা নেমেছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। তাই আমাদের মতো তরুণদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়_ 'রাজপথ ছাড়ি নাই, ওয়াদাগুলি ভুলি নাই।'

তরুণদের চোখে দাবি আদায়ের যে আগুন দেখেছি, হয়তো যেটা ৪২ বছর আগে আমার বাবা দেখেছিলেন তার মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুদের চোখে দেশ স্বাধীনের শপথে। হয়তো এ কারণেই প্রবীণরা আমাদেরকে প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা বলছেন।
বাঙালি ২০০ বছর ব্রিটিশের লাঠি খেয়েছে। তারপর খেয়েছে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি। লাঠি বা লাথি কোনোটাই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিবার সংকটে আমরা গর্জে উঠেছি। 'শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলেরা অশান্ত হয়ে উঠেছি।'
আজ আবার আমাদের ডাক এসেছে। আমরা ঘর ছেড়েছি। এখনও আমরা 'শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে হয়েই আছি।' কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যদি কোনো টালবাহানা বা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হয়, তবে আমাদের অশান্ত রুদ্র মূর্তি এই অগি্নঝরা মার্চেই বেরিয়ে আসবে। তরুণরা অশান্ত হলে কী হয়, সেটা ইতিহাসের পাতায় লাল রক্তে অসংখ্যবার লেখা হয়েছে।
আমাদের আন্দোলনকে ভেস্তে দেওয়ার জন্য মৌলবাদী জামায়াত-শিবির ব্যাপকভাবে তৎপর। এজন্য তারা মিথ্যা প্রচার থেকে খুন, হামলা, বোমাবাজি_ কিছুই বাকি রাখেনি। আবার তাদের সহায়তা করতে আরেক দল হাজির হয়েছে। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, সময় থাকতে শুধরে যান; কারণ 'পক্ষ নিলে রক্ষা নাই'। আমরা শুধু আপনাদের নামটা বলব। প্রত্যুত্তরে জনগণ বলবে_ 'তুই রাজাকার, তুই রাজাকার'।
মৌলবাদী-জামায়াত শিবিরের উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা নিরস্ত্র। কিন্তু তাই বলে দুর্বল ভেবে আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। '৭১ সালেও আমরা নিরস্ত্র ছিলাম। তোমরাই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলে। শুধু সংগঠিত হতে যা দেরি হয়েছিল। এবার তো আমরা আরও সংঘবদ্ধ রয়েছি।
ধর্মের নামে অপপ্রচার চালিয়ে লাভ হবে না। কারণ আমজনতা জানে, কারা মসজিদে আগুন দেয়, কারা ওলামাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আমজনতা এখন জেনে গেছে 'ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার'। তাই মুখে মুখে ধ্বনিত হচ্ছে_ 'আমার ধর্ম আমার থাক, জামায়াত-শিবির নিপাত যাক।'
যে যুদ্ধ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম শুরু করেছিলেন; শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকতে আমরা সে যুদ্ধ শেষ না করে ঘরে ফিরব না। কারও কোনো আশ্বাস, কোনো প্রতিশ্রুতিতে চিড়া ভিজবে না। কারণ এ আন্দোলন কারও একার বা কোনো দলের না। এ আন্দোলন আমাদের সবার। তাই_
'ঘাতক যদি বেঁচেই থাকে
এ রায় আমি মানব না
রাষ্ট্রদ্রোহ করব তবু
ফাঁসির দাবি ছাড়ব না'।
সিদ্দিক আহমেদ :খুলনার নির্দলীয় গণমঞ্চের অন্যতম সংগঠক

Source: http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&action=main&menu_type=&option=single&news_id=333863&pub_no=1348&type=

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন