শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৩

জামায়াত শিবিরের তাণ্ডব | স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

সমকাল । ফসিহ উদ্দীন মাহতাব
সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে জামায়াত-শিবিরের নারকীয় তাণ্ডব মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতা ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনিক দুর্বলতা পাওয়া গেলে ওইসব স্থানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। জামায়াতের তাণ্ডবের পর কিছু জেলায় সেনা মোতায়েন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিসিদের আবেদন নিয়ে সরকার বিব্রত। সরকার মনে করছে, সেনা মোতায়েনের আবেদন করা মাঠ প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার জন্য 'অসহায়ত্ব' প্রকাশ করা। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা চলাকালে ডিসিদের ভূমিকা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কোনো কোনো ডিসি জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারেননি বলে সরকার মনে করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসব 'দুর্বল মানসিকতার' ডিসিকে প্রত্যাহার করে উদ্যমী কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ বিষয়ে সরকারের এক উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, কয়েকটি জেলায় ডিসি নিয়োগের জন্য সম্ভাব্য একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। ডিসি ফিটলিস্টভুক্ত বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের (যাদের মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে) মধ্য থেকে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারের আস্থাভাজন এমন অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম সচিবদের মধ্য থেকে বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। আগামীতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় আসার পর জামায়াত-শিবির আরও বেপরোয়া হতে পারে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠ প্রশাসনকে আরও 'ডায়নামিক' করতে চায় সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম সমকালকে বলেন, 'সেনা মোতায়েনের জন্য ডিসিদের আবেদনের বিষয়টি কোন প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' তিনি বলেন, দেশে সেনা মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তভাবে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তিনি আরও বলেন, ডিসি ফিটলিস্টভুক্তদের মধ্য থেকে মাঠ প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক পুলিশ ও বিজিবির ওপর জামায়াত-শিবিরের নৃশংস হামলা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আর্মড ব্যাটালিয়ন ফোর্স মোতায়েনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা। ৩ মার্চ রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, ফেনী, জয়পুরহাট, নাটোরসহ ৪০টি জেলা থেকে এসব আবেদন পাঠানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৩ মার্চ দুপুরে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াছিন সেনাবাহিনী চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি ফ্যাক্স বার্তা পাঠান।

জানা যায়, জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল (৩ মার্চ) চলাকালে জেলার সীমান্ত সংলগ্ন পাঁচবিবি থানায় হামলা এবং জয়পুরহাট সদরের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ চলাকালে হরতাল সমর্থক জামায়াত-শিবির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব ও আর্মড ব্যাটালিয়নের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। এমন পরিস্থিতিতে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াছিন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থেই তিনি (ডিসি) সেনাবাহিনী চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ফ্যাক্স বার্তা পাঠান। এরকম আরও অনেকে আবেদন পাঠান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন