সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৩

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাবি: অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দেওয়াল গড়ে তুলতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষকরা।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সংহতি সমাবেশে তারা এ আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাও, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখে দাঁড়াও-আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াও’ শীর্ষক সংহতি সমাবেশে বক্তারা সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের ধিক্কার জানান। এসব আক্রমণ পরিচালনাকারী জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধেরও দাবি জানান তারা।
সংহতি সমাবেশে পাঠ করা ঘোষণাপত্রে ৭ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হচ্ছে- হামলাকারীদের প্রতিহত করা এবং সামাজিকভাবে বয়কট করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে আইনি প্রক্রিয়া বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণে সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, যুদ্ধাপরাধীদের স্বপক্ষের শক্তিকে প্রতিহত করতে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্ব্বোচ্য শাস্তি নিশ্চিত ইত্যাদি।

তিন পর্বের আয়োজনে শুরুতেই ছিল বিভিন্ন জেলায় সহিংসতায় আক্রান্তদের বক্তব্য। এরপর সংহতি সমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। শেষ পর্বে  বিশিষ্টজনেরা  সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

সম্প্রতি সাঈদীর রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত এ সংহতি সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ‘‘ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ যেখানে হয়েছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি সেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তাই এ মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।’’

সমাবেশে উপস্থিত হয়ে শাহবাগ গণজাগরন মঞ্চের পক্ষ থেকে সংহতি জানান মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ বেশ কয়েকজন সংগঠক।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে দেশের প্রবীণ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে কারা জড়িত, কারা তাদের পরিচর্যা করছে, সেটা সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ নই। পরিচর্যা পেয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু তুলে আক্রমণ করেছে।”

সমাবেশের ধারাবাহিকতায় আগামী ২৯ মার্চ টিএসসি ক্যাফেটরিয়ায় সুধী সমাবেশ হবে বলে জানান তিনি।

সাম্প্রায়িক হামলার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ‘‘অনেকে বলে থাকেন, হিন্দুদের বাড়ি-ঘর দখল করার জন্য হামলা হয়। আসলে তা কিন্তু সব সময় নয়। কারণ, এর একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হলো হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা চালালে তারা এদেশ ছেড়ে চলে যাবে। তখন বাংলাদেশ হবে শতভাগ মুসলমানদের রাষ্ট্র। ফলে   পাকিস্তান আদলের বাংলাদেশ বানাতে মৌলবাদী শক্তির সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের  শিক্ষক অধ্যাপক সাদ উদ্দীন জামায়াত-শিবিরকে শুধু প্রতিরোধ আর নিষিদ্ধ করা-ই নয়, নিশ্চিহ্ন করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়েছিল। আমরা তখন অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। তাদের বর্তমান হামলার বিরুদ্ধে ৭৭ বছর বয়সে এসেও অস্ত্র কাঁধে নেওয়ার প্রয়োজন হলে নেবো।”

ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘রাষ্ট্রযন্ত্র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা যথার্থভাবে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নিরাপত্তা দিতে না পারায় যে হামলা হয়েছে, তা ছিল মর্মন্তুদ ঘটনা।”

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি অব্যাহত রেখে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মত দেন এ শিক্ষাবিদ।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশের সঞ্চালনায় সমাবেশের প্রথম পর্বে বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত ও প্রতিরোধকারীদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাজী নূর মোহাম্মদ, বগুড়ার ধুনটের মেয়র এজিএম বাদশা, নোয়াখালীর রাজগঞ্জের মোজাম্মেল হোসেন, সাতক্ষীরায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা মামুনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস তিন্নি, গাইবান্ধার কলেজ শিক্ষক সুনীল কুমার বর্মণ, সাতক্ষীরার মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, লক্ষীপুরের রামগঞ্জের বিমল কান্তি দাস ও গাইবান্ধার হাফিজা বেগম কাকলী।

সমাবেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যে সাতক্ষীরার মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ‘‘প্রথমে কয়েকজন লোক এগিয়ে আসায় জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। পরে ঐক্যবদ্ধভাবে হামলার মোকাবেলা করে এলাকাবাসী।”

অশ্রুসিক্ত বক্তব্যে স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘‘দেশবাসীকে সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমার স্বামীকে ওই দিন আমার চোখের সামনে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।  আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই।’’

নোয়াখালীর রাজগঞ্জের বিমল কান্তি আচার্য বলেন, ‘‘সাঈদীর রায় ঘোষণার পর সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজগঞ্জের ৬টি মন্দির জ্বালিয়ে দেয়। আমাদের বাড়ি-ঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।’’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। তাহলে কেন বার বার এ আঘাত আমাদের ওপর আসে। আমরা কি এ দেশে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো না?’’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন