শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৩

এইচএসসি পরীক্ষার সময়েও আন্দোলন করবে বিএনপি

প্রথম আলো | তানভীর সোহেল | তারিখ: ২২-০৩-২০১৩
উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষা করছে দুঃসংবাদ। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মতো তারাও নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাদের পরীক্ষার জন্য যে সময়সূচি দেওয়া হয়েছে, তার অনেকটা জুড়েই থাকছে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এবার এইচএসসি পরীক্ষার জন্য আন্দোলনে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ওই পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে ২৮ মে পর্যন্ত। এবার প্রায় সাড়ে নয় লাখ পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবে।
সূত্রমতে, গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আন্দোলনের সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আসন্ন পরীক্ষার বিষয়টিও উঠে আসে। কমিটির সদস্যরা পরীক্ষার কারণে আন্দোলনে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলে একমত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি ও জোট এপ্রিল এবং মে মাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ সময় তাদের দল কঠোর অবস্থানে থাকবে।
ওই নেতা বলেন, সরকার সংকট তৈরি করেছে। এ অবস্থায় বিরোধী দলকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। সরকার কীভাবে পরীক্ষা নেবে, সেটা সরকারের ব্যাপার। তারা বন্ধের দিন, সরকারি ছুটির দিন কিংবা রাতে পরীক্ষা নিতে পারে বলে মত দেন ওই নেতা।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দাবি আদায়ের জন্য এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে কোনো কিছু বিবেচনার সুযোগ বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের নেই। এপ্রিল ও মে মাসটা আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এপ্রিলের মধ্যে আন্দোলন এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে সরকার দাবি পূরণে বাধ্য হয়।
বিএনপি গত চার বছর আন্দোলনের সময় এসএসসি, এইচএসসিসহ যেকোনো পাবলিক পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত ছিল। চলতি মার্চে এসএসসি পরীক্ষার কারণে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল না দলটির। তবে মার্চের শুরুতেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ মার্চ হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট আরও চার দিন হরতাল পালন করে। বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের হরতালের কারণে মোট পাঁচ দিনের পরীক্ষা পেছানো হয়।
ওই সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ১৮ দলীয় জোট জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করছে। আন্দোলনের কারণে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে এই কষ্টটুকু মেনে নেওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসের নানা কর্মসূচি থাকবে। এক দফা দাবির বাইরে কারাবন্দী দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হবে। এগুলো অবশ্য মূল আন্দোলনের কর্মসূচি হবে না।
বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, এপ্রিলে ঢাকায় একটি বড় ধরনের সমাবেশ করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেখান থেকেই পরবর্তী ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেই তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তবে সম্ভাব্য তারিখ ৮ এপ্রিল। সমাবেশের আগে সাম্প্রতিক সহিংসতায় বিভিন্ন জেলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিদর্শন করবেন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে গেছেন তিনি। এরপর ২৩ ও ২৪ মার্চ বগুড়া ও জয়পুরহাটে যাবেন। এ মাসের শেষে ৩০ বা ৩১ মার্চের দিকে তাঁর সাতক্ষীরা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন