শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

শাহবাগের পাল্টা মঞ্চ নির্মাণের হুমকি খালেদার

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা মঞ্চ অপসারণ না হলে পাল্টা মঞ্চ নির্মাণের হুমকি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

শুক্রবার বিকালে লৌহজংয়ে এক জনসভায় তিনি বলেন, “ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই-  বলে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চ-ফঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে ঢাকায় জনগণের মঞ্চ নির্মাণ করা হবে।”
সরকার শাহবাগ আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর- উপাসনালয়ে হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা।

লৌহজংয়ের জনসভায় তার বক্তৃতার বেশিভাগ অংশ জুড়ে ছিলো শাহবাগ আন্দোলন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের পর শাহবাগ চত্বরে তরুণদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন শুরু হয়।

খালেদা জিয়া শাহবাগ তরুণদের সমাবেশের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “শাহবাগ আন্দোলন নিরপেক্ষ নয়। এখানে আওয়ামী লীগ ও নাস্তিক ছেলে-পেলে আছে। তারা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না।”

শাহবাগ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “দেশে ১৬ কোটির মধ্যে পাঁচ কোটি যুবক-তরুণ আছে। তার এক ভাগও এই শাহবাগে নেই।”

“শাহবাগের তরুণরা আইন-আদালত-বিচার মানে না। তারা সরকারও মানে না। এই নষ্ট ও নাস্তিক তরুণদের নিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অপকর্ম করছে। উদ্দেশ্য জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানো।”

খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, “একদিকে বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে শাহবাগীদের পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করানো হচ্ছে। তাদের সরকার টাকা-পয়সা দিয়ে খাবার সরবারহ করে লালন-পালন করছে সরকার।’’

“এই তরুণরা কেবল ফাঁসি ফাঁসি বলে লাফায়। গান-নাচ করে তারা। সেখানে নানা অপকর্ম হচ্ছে।”

বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, এই শাহবাগীদের মুখে দুর্নীতি, সরকারের অপশাসন, গণহত্যা, পদ্মাসেতুর কেলেঙ্কারি, সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যার বিষয়গুলো উঠে আসেনি।

লৌহজংয়ের গোয়ালী মান্দ্রা মনিপাড়া কালিমন্দিরের সামনে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই জনসভা হয়।

এর আগে সড়ক পথে গুলশান থেকে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে লৌহজং পৌঁছে খালেদা গোয়ালীমান্দ্রা মনিপাড়া কালীমন্দির পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরে পূজামণ্ডপ রক্ষা কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিরোধী দলীয় নেতা পূজামণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কাছে এক লাখ টাকার অনুদান হস্তান্তর করেন। পাশাপাশি তার দল আগামীতে ক্ষমতায় গেলে কালি মন্দির পুননির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

গত ৫ মার্চ রাতে এই কালিমন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুবৃর্ত্তরা।

লৌহজংয়ের গোয়ালী মান্দ্রা মনিপাড়া কালিমন্দির পরিদর্শন শেষে ৩০ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরাও ওই তরুণদের বলতে চাই, স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আমরাও বিচার চাই। সেখান দল-মত বিবেচনা করা যাবে না। সবই স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার করতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সরকার কেবল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ধরছে। সাংবাদিক সিরাজুর রহমান ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর একজন রাজকার। আওয়ামী লীগের ভেতরে এরকম রাজাকার আরো অনেকে আছে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেদা বলেন, “এই বিচার দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। নানা প্রশ্ন উঠেছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীসহ সব অপকর্মের বিচারে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করবো।”

সাম্প্রতিক সহিংসতায় হতাহতের কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পুলিশ  গণহত্যা বন্ধ না করলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে এই বাহিনী নেয়া নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।”

ক্ষমতায় গেলে তরুণ ও যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করেন তিনি। খালেদা জিয়া দেশকে একটি উন্নয়নশীল ও আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলারও প্রতিশ্রুতি দেন।

জেলা সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে ওই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খালেদা জিয়া ঢাকার পথে রওয়ানা হন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন