আমীর মাহমুদ ভূঁইয়া
ধর্মভিত্তিক উগ্রপন্থী জঙ্গি মৌলবাদী অপশক্তির উত্থান ঘটায় দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সত্যিই শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী চরমপন্থী রাজনৈতিক দলের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে দেশে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এবারের সহিংস কর্মকা- অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মওলানা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত জামাতে ইসলাম ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির এতোই দূরন্তপনা ও উশৃঙ্খল হয়ে ওঠেছে যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের রুখতে হিমশিম খাচ্ছে। জামাত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, আসলে কি এরা এই মাটিরই সন্তান?
ধর্মভিত্তিক উগ্রপন্থী জঙ্গি মৌলবাদী অপশক্তির উত্থান ঘটায় দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সত্যিই শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী চরমপন্থী রাজনৈতিক দলের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে দেশে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এবারের সহিংস কর্মকা- অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মওলানা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত জামাতে ইসলাম ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির এতোই দূরন্তপনা ও উশৃঙ্খল হয়ে ওঠেছে যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের রুখতে হিমশিম খাচ্ছে। জামাত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, আসলে কি এরা এই মাটিরই সন্তান?
গত ২২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর জামাত শিবির পবিত্র মসজিদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে দেশব্যাপী একযোগে চালায় তা-ব। তাদের নৃশংসতা ও র্ব্বরতা থেকে রক্ষা পায়নি গণমাধ্যম কর্মী, জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার প্রেসক্লাব গনজাগরণ মঞ্চ, পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং নিরীহ মুসল্লীগন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জামাত ইসলামীর নায়েব আমীর দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পরই শুরু হয় দেশব্যাপী তা-ব। হরতাল কর্মসূচির নামে জামাত শিবিরের সন্ত্রাসী বাহিনী রাস্তায় নেমে নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং চালায় দানবীর তা-ব। পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে জামায়াত শিবির সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়। পুলিশ সাধারণ জনগনের জানমালের হেফাজতের প্রাণপণ চেষ্টা করে। সংঘাত সংঘর্ষ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, হিংস্র হায়েনার দল পুলিশের উপর মারমুখী হয়ে সশস্ত্র আক্রমণ করে এবং পুলিশ জীবনবাজি রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। শিবির প্রতিবাদী জনতার উপরও হামলা করে হতাহতের ঘটনা ঘটায়। মৃত্যুর মিছিলে প্রায় ১শ জনের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। জামাতের ডাকা হরতাল কর্মসূচি পালনকালে এ ভাবেই তাজা প্রাণগুলো বুলেটের আঘাতে ঝড়ে পড়ছে। এই মৃত্যুর মিছিল যেন আর দীর্ঘ না হয় এটাই সচেতন মহলের প্রত্যাশা।
একাত্তরের ঘাতকচক্র এবং হিংস্র হায়েনার দল আজ মরিয়া হয়ে তা-ব চালাচ্ছে। হিংস্র পাষ- বর্বর জালিমরা আজ বাঙালির রক্ত নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। তাই তো বাঙালির রক্ত নিয়ে এরা হোলি খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছে। এদের নৃশংসতা ও বর্বরতার শিকার হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়, আহমাদীয়া মুসলিম জামাত। রামুর তা-বের কথাও ভুলে যাবার নয়। এদের হিংস্র থাবা থেকে কেউই নিরাপদ নয়। অপশক্তি আজ রক্ত নেশায় মেতে উঠেছে। ইসলামের নামেই এরা দেশব্যাপী রক্তপাত ঘটাচ্ছে।
ইসলামের নামে চলছে একাত্তরের গণহত্যাকারী পাকবাহিনীর লেজুড়বৃত্তিকারী জামাত-শিবিরের সকল ধর্মবিরোধী অপকর্ম। জামাত আজ গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে। এরা দেশের পবিত্র সংবিধান ও আইন আদালতের কোনো তোয়াক্কা করে না। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি নেই এদের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা এবং ভরসা। দেশ জাতি রাষ্ট্রের সর্বনাশ হলে ও এদের কোনো কিছু যায় আসে না। এদের কর্মকা-ে প্রশ্ন জাগে আসলে কি এরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক? এই দেশের নাগরিক হিসাবে এদের নেই কোনো দায়বদ্ধতা। তাহলে এরা এতো কেন মারমুখী? রাজপথে নেমে এরা যেভাবে নৈরাজ্যও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলছে তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, এরা বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে আজো মেনে নেইনি।
একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে জামাতের শীর্ষ নেতাদের বিচার কার্যক্রম ট্রাইব্যুনালে চলছে। জামাতের একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল যুদ্ধাপরাধের দায় মুক্ত হয়ে শুদ্ধ হবার। মানুষ অপরাধ করলে তার বিচার কি হবে না? একটা সভ্য সমাজে অপরাধী অপরাধ করে কিভাবে পার পেয়ে যেতে পারে। আমরা আইনের শাসন চাই। আমরা ন্যায় বিচারক সুশাসক এবং সুশাসন প্রত্যাশা করি। তাহলে অপরাধীর প্রকৃত বিচার কেন চাইবো না? ইসলাম ধর্ম রাষ্ট্রদ্রোহী, খুনি, ধর্ষণকারী, অগ্নিসংযোগকারী ও পরের সম্পদ লুণ্ঠনকারীর সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা আমাদের জন্য অনুপ্রেরনার উৎস।
মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য যে শান্তির ধর্ম ইসলামকে অবর্তীণ করেছেন, আজ এই পবিত্র ধর্মের নামেই সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কাজ করে রাষ্ট্রে অচলাবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে জামাত-শিবির চক্র। ইসলামের নামে একটি বড় দল এবং জামাত-শিবির আজ নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতে ওঠেছে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। তাইতো ধর্মের নামে চলছে চরম মিথ্যাচার। কেন এই উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচার ? ধর্মের নামে ছড়ানো হচ্ছে উত্তেজনা এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষ। ধর্ম ও রাজনীতির নামে রক্তপাত ঘটাতে উসকানি দেয়া হচ্ছে।
মাওলানা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত জামাতে ইসলাম কি আসলে সত্যিকারের ইসলামী দল? বস্তুতঃ এটি কেবল একটি রাজনৈতিক দল। মওদুদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি ইসলাম এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। তাই বিজ্ঞ আলেম-ওলামাগণ ও পীর-মাশায়েখগণ এর বিরোধিতা করে আসছেন। কেবল তাই নয়, মওদুদী আল্লাহ, নবী রসূল, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবী (রাঃ) সম্পর্কে মারাত্মক কটূক্তি করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছেন। (দেখুন দ্র. জামায়াতে ইসলামীর বিবর্তন ধারা- এ.টি. চৌধুরী,- জামায়াতের আসল চেহারা- মাওলানা আব্দুল আউয়াল, জেহাদবিল কুরআন- শাহ মোস্তাফিজুর রহমান) কই এজন্য তো মওদুদীর ফাঁসির দাবি করা হচ্ছে না এবং তার বই পুস্তক বাজেয়াপ্ত করার জন্য জামাত এবং সমমনা দলগুলো কোনো দাবি সরকারের কাছে পেশ করছে না। রাষ্ট্রের বা সমাজের সামগ্রিক স্বার্থের প্রয়োজনে বিপজ্জনক সর্বনাশা দুষ্কৃতিকারীকে কঠোরতম শাস্তি প্রদানে ইসলাম ইতস্তত করে না। যারা যুগে যুগে মনুষত্ব ও মানবতার কবর রচনা করছে এবং তা করেছে ধর্মের নামে, খোদারই নামে তাদের রুখবার সুযোগ এসেছে। এদের হিংস্র থাবা থেকে বাঁচতে হলে সম্মিলিতভাবে সকল শুভশক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আমীর মাহমুদ ভূঁইয়া : সাংবাদিক।
ভোরের কাগজ : শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন