শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৩

১৯৭১, ২০০১, ২০১৩ : সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের মিল

হেলাল উদ্দিন
মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীর বিচার এবং সেই বিচারকে চ্যালেঞ্জ করে জামায়াত-শিবির এ দেশে নৈরাজ্য, হত্যা, খুন শুরু করেছে। সংখ্যালঘু পরিবার ও উপাসনালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে। এসব কর্মকা-ও মানবতাবিরোধী এবং আমাদের স্বাধীনতা মূল আদর্শের পরিপন্থী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশের ছাত্র, যুবক, জনতা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে একটি সোনার বাংলা গঠনের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেখানে কোনো ধর্মান্ধতার ঠাঁই থাকবে না। উগ্রতার কোনো স্থান থাকবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। যুদ্ধজয়ী একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করার সুযোগ পায়- এই উদাহরণ শুধু বাংলাদেশেই রয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। তাদের দেয়া হয়েছে পুরস্কার। ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে স্বাধীনতা মূলমন্ত্র মুছে ফেলার। সেই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতাবিরোধীরা গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে। এ আমাদের লজ্জার কথা।

আজকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি দলকে এক কাতারে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু না। জামায়াতে ইসলামী কখনো ইসলামি দলের কাতারে পড়ে না, ফেলাও ঠিক হবে না। তাদেরকে আমরা চিনি মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে। তাদের দলের শীর্ষনেতারা যুদ্ধাপরাধী। কিন্তু অন্য ইসলামি দলগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নেই। তাদের ভূমিকাও যুদ্ধাপরাধীদের বিপরীতে।

১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী কিংবা তাদের ছাত্রসংগঠন যে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছে, সে দায়ভার সকল ইসলামি দলের কাঁধে পড়ে নাÑ তা দেয়াও ঠিক হবে না। জামায়াতে ইসলামী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষ নিয়ে এ দেশের মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিকদের হত্যায় মেতে উঠে। ১৯৭১ সালে জামায়াত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত করে যে কায়দায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল, সহিংসতা ছড়িয়েছিল, হত্যাÑখুন করেছিল, একই কায়দায় ২০০১ সালে বিএনপিÑজামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে এদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন করেছিল।

২০১৩ সালে যখন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ধর্মের ধুয়া তুলে সারাদেশের সাধারণ মানুষকে সহিংসতায় অংশ নিতে উসকানি দিয়েছে। বগুড়াতে এ হামলার পর সেখানকার প্রবীণরা বলেছেন, এমন ধ্বংস, নৈরাজ্য ১৯৭১ সালেও জামায়াতÑপাকবাহিনী করেনি। এ কারণেই ১৯৭১, ২০০১ ও ২০১৩ সালের জামায়াতÑশিবিরের হামলা ও নৈরাজ্যের একটি বড় মিল রয়েছে। নতুন প্রজন্মকে এই মিল খুঁজে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ দেশ যেনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হয়, তার দায়ভার কাঁধে তুলে নিতে হবে গণজাগরণ মঞ্চের নতুন প্রজন্মকেই। আর যেনো স্বাধীন দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা না হয়। আমরা যেনো দেশকে অসম্প্রদায়িকতা ও প্রগতির দিকে নিয়ে যেতে পারি, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। ভীত না হয়ে যেভাবে সচেতন বাঙালি মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছে, ২০০১-এর নৈরাজ্য মোকাবেলা করেছে, ২০১৩-এর নৈরাজ্যও সেভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। ‘এ আঁধার কাটবেই।’

হেলাল উদ্দিন : সাংবাদিক, সিরাজগঞ্জ।
ভোরের কাগজ : বুধবার, ১৩ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন