শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৩

গণজাগরণ সফল করতে মরতেও রাজি মার্কিন প্রবাসী

ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটা বাকি রয়ে গেছে। ২০ বছর আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। আমার পরিবার সেখানে স্থায়ী, ছেলেমেয়েরাও বড় হয়েছে। আমার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশে গিয়ে দেখতে পাবো বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন সেই সময় এসেছে।

কথাগুলো বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী রুহেল আহমেদ। হৃদরোগে আক্রান্ত ৬০ বছর বয়সী এই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এখন শাহবাগের মাসব্যাপি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম।

একাত্তরে ১৮ বছর বয়সেই ছাত্র থেকে পরিণত হয়েছিলেন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধায়। ৪২ বছর আগের এই মাসে শুরু হওয়া সেই যুদ্ধে তিনি আহত হয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর চলতি বছরের শুরুতে আবার ফিরে এসেছেন মাতৃভূমিতে। শরীর দুর্বল বটে, কিন্তু মানসিকভাবে এখনও শক্ত তিনি।

রুহেল জানান, ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসার কাজে ঢাকা এসেছিলেন। তখনই শুরু হয় শাহবাগের আন্দোলন। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা হাতে এতে সরাসরি যোগ দেন তিনি। গত ৬ সপ্তাহের যাবতীয় অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন।

তিনি প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে থাকছেন। আন্দোলনের ইতিহাস শুনছেন তরুণদের মুখে। বিপদের সম্ভাবনা আছে জেনেও সামাজিক মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন এই আন্দোলন। এমনকি আন্দোলন সফল করার জন্য মরতেও আপত্তি নেই তার।

মার্চের ৮ তারিখ ক্যামেরা দিয়ে আন্দোলনের ছবি তুলছিলেন রুহেল। এমন সময় তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয় গণজাগরণ চত্বরে। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, “সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছিল। বক্তাদের একজন বললেন, আমাদের বাবা-মা একাত্তরে ভয় পায়নি, আমরাও এখন পাবো না। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে সবাই আবার বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকলো।”

সাম্প্রতিককালের তাহরির স্কয়ারের আন্দোলনের সঙ্গে এর তুলনা করা যায় কিনা, এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, দুটোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বলেন, “আমরা গান্ধীর পথে আগাচ্ছি, আমরা সহিংস নই। এরকম আগে দেখা যায়নি। এখানে শিশুরা রয়েছে, মায়েরা রয়েছেন, এমনকি হাঁটতে পারে না এমন বৃদ্ধরাও রয়েছেন।”

তিনি তরুণ প্রজন্মকে ‘ফেসবুক প্রজন্ম’ নামে অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “তারা সম্পূর্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারা বিচার পেলে ছাড়বে না। তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ চায়, একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চায়। আশা করি সেটা দেখা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবো।”

স্বাস্থ্যের জন্য আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাচ্ছেন রুহেল আহমেদ। চলতি সপ্তাহেই তার একটি হার্টের অপারেশন হবে। এরপর তিনি আবার আন্দোলনে যোগ দিতে প্রস্তুত। তার ভাষায়, “বিশ্বাস করুন, আমি ফিরে যাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন