মাহমুদ আহমদ সুমন
কয়েকদিন আগে নামাজ শেষ না করেই বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভেতরে যে তা-ব চালিয়েছে জামাত-শিবির ও তাদের সমর্থক দলের নেতাকর্মীরা তা কখনো ইসলামসম্মত হতে পারে না। এরা মসজিদের ভেতরে জায়নামাজে এবং সংরক্ষিত ধর্মীয় গ্রন্থে আগুন দেয়। মসজিদের টাইলস ও আসবাবপত্র ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারতে দেখা যায়। জানা যায় যে, জামাত-শিবিররা প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের বিরুদ্ধে তাদের পছন্দমতো ফতোয়া দেয়ার জন্য খতিবের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। খতিব তাদের অন্যায় দাবি না মানলে এরা মসজিদের ভেতর আন্দোলন শুরু করে দেয় যার ফলে অনেক মুসল্লি ঠিকমতো জুমার নামাজও আদায় করতে পারেননি। জামাত-শিবির ও তাদের সমর্থকরা মসজিদের বাইরেও চালায় তা-বলীলা। তাদের হামলায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও গুরুতর আহত হন।
কয়েকদিন আগে নামাজ শেষ না করেই বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভেতরে যে তা-ব চালিয়েছে জামাত-শিবির ও তাদের সমর্থক দলের নেতাকর্মীরা তা কখনো ইসলামসম্মত হতে পারে না। এরা মসজিদের ভেতরে জায়নামাজে এবং সংরক্ষিত ধর্মীয় গ্রন্থে আগুন দেয়। মসজিদের টাইলস ও আসবাবপত্র ভেঙে পুলিশের দিকে ছুড়ে মারতে দেখা যায়। জানা যায় যে, জামাত-শিবিররা প্রজন্ম চত্বরের তরুণদের বিরুদ্ধে তাদের পছন্দমতো ফতোয়া দেয়ার জন্য খতিবের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। খতিব তাদের অন্যায় দাবি না মানলে এরা মসজিদের ভেতর আন্দোলন শুরু করে দেয় যার ফলে অনেক মুসল্লি ঠিকমতো জুমার নামাজও আদায় করতে পারেননি। জামাত-শিবির ও তাদের সমর্থকরা মসজিদের বাইরেও চালায় তা-বলীলা। তাদের হামলায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও গুরুতর আহত হন।
জামাত-শিবিরসহ কয়েকটি ধর্মান্ধ সংগঠন সারা দেশে যে তা-বলীলা চালিয়ে যাচ্ছে তাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় এই দলগুলো কখনো ইসলামিক দল হতে পারে না। ইসলামের এক অর্থ শান্তি। ইসলামের আহ্বান হচ্ছে সকলকে শান্তির দিকে আহ্বান কর। ইসলামের যে অনুসারী তার মুখে সব সময় থাকবে শান্তির বাণী। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পরিচিত-অপরিচিত সবার কাছে সে শান্তির বার্তা পৌঁছাবে। ইসলাম মারামারি, সংঘর্ষ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে কখনো অনুমতি দেয় না বরং এসব কাজকে ইসলাম ঘৃণা করে। এই দলগুলোকে যদিও বলা হচ্ছে ইসলামিক দল মূলত এরা ইসলামিক দল হতে পারে না। এরা সন্ত্রাসী, এরা জঙ্গিগোষ্ঠী। একটু ভেবে দেখুন! তারা যখন পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছিল তখন কি এদেরকে ইসলামের অনুসারী মনে হয়েছিল? যারা ইসলামের লেবাস ধারণ করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে তারা যদি তাদের হৃদয়কে প্রশ্ন করে আমরা যা করছি তার অনুমতি কি ইসলাম আমাদের দেয়? তাহলেই তারা বুঝতে পারবে আসলে এসব হচ্ছে সন্ত্রাসীদের কাজ এসব ইসলামের পক্ষে কাজ হতে পারে না। আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হলো মসজিদ। আর এই মসজিদের পবিত্রতা যারা নষ্ট করে তারা কোন ধরনের মুসলমান?
আমাদের সবার অবশ্যই সেই ইতিহাস জানা আছে যে, মহানবী (সা.) নবুওয়াত দাবি করার পরম মক্কাবাসী তার ওপর কতোই না জুলুম-নির্যাতন করেছে। মহানবী (সা.)-কে বয়কট পর্যন্ত করে রেখেছিল। তাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়েছিল, তার পথে কাঁটা দিয়ে রাখা হতো, তাকে পাথর মেরে তার পবিত্র দেহ থেকে রক্ত ঝরিয়েছে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টাও করা হয়েছে। তার নিরপরাধ সাহাবিদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে, কোনো কোনো সাহাবিকে বুকে পাথর চাপা দিয়ে উত্তপ্ত মরুভূমিতে সারা দিন সূর্যমুখী করে ফেলে রাখা হয়েছে। মহানবী (সা.)কে মাতৃভূমি থেকে কেমলমাত্র ধর্মের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তবুও কিন্তু তিনি (সা.) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি এবং কাউকে যুদ্ধেরও অনুমতি দেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত মক্কায় আর থাকতে না পেরে সব কিছু ফেলে দিয়ে খালি হাতে মদিনায় হিজরত করেন। মক্কাবাসীরা দলবল নিয়ে মদিনার দিকে অগ্রসর হল এই কারণে যে, মদিনায় মুসলমানদের ওপর তারা আক্রমণ চালিয়ে তারা সব মুসলমানকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে আর নবধর্ম ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করে দেবে।
পরিস্থিতি যখন এমন পর্যায়ে পৌঁছলো তখন আল্লাহতায়ালা হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে ওহির মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে তাদেরকে আত্মরক্ষার্থে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হলো, কেননা তাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে এবং নিশ্চয় আল্লাহ মজলুমদের সাহায্য করতে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাবান’ (২২:৩৯)। এই আয়াতটিই ধর্ম যুদ্ধ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত, যার মাধ্যমে মুসলমানদের আত্মরক্ষার্থে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অনুমতি প্রদান করা হয়। কিন্তু ভেবে দেখতে হবে কোন কারণে ইসলাম এর অনুমতি দিয়েছিল?
তেরটি বছর যাবৎ যেখানে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মুসলমানরা এবং তাদের নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে মদিনায় হিজরত করলেন, সেখানেও যখন আক্রমণ চালানো হলো তখনই আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের এ অনুমতি দেয়। আল্লাহ কি পারতেন না মক্কাতে যখন নবী করিম (সা.)-এর ওপর কাফেররা নির্যাতন চালিয়েছে তখন তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে বা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাকে (সা.) অনুমতি প্রদান করতে? কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালা তা কেন করেননি? এর মূল কারণ হলো ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম শান্তির শিক্ষা দেয়। কারো ক্ষতি সাধন, সমাজে বিশৃঙ্খলা করার শিক্ষা ইসলামে নেই। আজকে ধর্মের নামে যারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে তাদেরকে কোনোভাবেই ইসলামী দল বলা যায় না। নিঃসন্দেহে তারা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের দ্বারাই এসব কাজ সাঝে।
দেশে যারা আজ ধর্মের নামে নাশকতামূলক কাজ করে যাচ্ছে, তারা কিন্তু আবার ইসলামের আদর্শের কথাও বলে আর নিজেকে শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার গর্বও করে থাকে। এরা এ কথাও খুব দাবির সঙ্গে বলে যে, আমরাই প্রকৃতভাবে আল্লাহ ও রাসুলের অনুসারী। আসলে কি তাই? তাদের চেহারার দিকে তাকালে মনে হবে না জানি কতো বুজর্গ আল্লাহওয়ালা। কিন্তু তারা যে ইবলিসের চেয়েও নিকৃষ্ট তা কিন্তু সাধারণ মানুষ আগে জানতো না এখন সবাই বুঝতে পারতেছে তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে। জামাত-শিবিররা যদি ইবলিসের চেয়েও জঘন্য না হতো তাহলে কিভাবে পারে আল্লাহর ঘরের পবিত্রতা নষ্ট করতে? তারা যদি শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতো তাহলে এদের দ্বারা এমন গর্হিত কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। শুধু মসজিদ কেন সকল ধর্মের উপাসনালয়ের পবিত্রতা এবং এসবের হেফাজতের শিক্ষাই ইসলাম আমাদেরকে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিকতর জালেম আর কে যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম নিতে বাধা দেয় এবং সেগুলোর ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়? (সুরা বাকারা : ১১৪)।
যারা আল্লাহর ঘরের অবমূল্যান করে তাদেরকে তিনি জালেম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাহলে চিন্তা করে দেখুন এরা কি মুসলমান? জামায়াত-শিবিরসহ যারা ধর্মের নামে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধর্মকে কি এই জঙ্গিরা রক্ষা করতে চায়? ধর্ম রক্ষার মালিক তো তিনি, যিনি ধর্ম সৃষ্টি করেছেন। যে কাজ খোদার জন্য নির্ধারিত সেই কাজের কথা এরা কিভাবে মুখে উচ্চারণ করে? তাই এইসব ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের আক্রমণ ও হামলা ঠেকাতে হলে সকল ধর্মের শান্তি প্রিয় মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুষ্টচক্র ও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ধর্মীয় এই সন্ত্রাসীদের রুখতে সরকার গড়িমসি করলে এ দেশে স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে। আল্লাহর ঘর থেকে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে পারে তারাই মূলত ইসলামের শত্রু, জাতির শত্রু, মানবতার শত্রু এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। কাজেই সরকারকে যে কোনো মূল্যে এই অশুভ শক্তিকে রুখতে হবে। শুধু জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে হবে না এ দেশের সকল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। ধর্মের নামে যেন কেউ রাজনীতি না করতে পারে এই ব্যবস্থাই করা উচিত। মহান খোদাতায়ালা আমাদের শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শে নিজেদের জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন আর এই সব ধর্মান্ধদের হাত থেকে রক্ষা করুন।
মাহমুদ আহমদ সুমন : লেখক।
ভোরের কাগজ : মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন