মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৩

গোলাম আযমের রায়ের পর নাশকতার জন্য ২০ কোটির তহবিল

ফিরোজ মান্না, জনকণ্ঠ ॥ রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের রায়ের পর জামায়াত-শিবিরের নাশকতার রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। বোমা, ককটেল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে ২০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে তারা। এই টাকা ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় বণ্টনও করা হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচীতে জেলা ও থানা শহর থেকে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছিল তারা নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছে। জামায়াতের সঙ্গে থাকা ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠনের কর্মীরাও প্রস্তুত রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা এ খবর দিয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে- তাদের কাছে রিপোর্ট রয়েছে, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারে রায় যাই হোক না কেন জামায়াত-শিবির গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মতো দেশজুড়ে তা-ব চালাবে। এই তা-বের জন্য বিরাট অঙ্কের একটি তহবিল গঠন করেছে জামায়াত। প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। সরকারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তারা টাকার অঙ্ক আরও বাড়াতে পারে। সরকার যদি কঠোর অবস্থানে থাকে- সেক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতির কৌশল পরিবর্তন করবে। এতে বেশি টাকার প্রয়োজন হবে বলে জামায়াতের নেতারা মনে করছেন। বোমা তৈরির জন্য দেশের বাইরে থেকে দক্ষ লোকও তারা দেশে নিয়ে এসেছে। যেসব জায়গায় জামায়াতের শক্তি বেশি সেইসব এলাকায় তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া নাশকতা চালানোর জন্য বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষকে টাকা দিয়ে পক্ষে নিয়েছে। বিচারের রায় ঘোষণার পর পরই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তারা নাশকতায় যোগ দেবে। বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রশিক্ষিত ছাত্রদের গোপনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কুখ্যাত রাজাকার কামারুজ্জামানের রায় নিয়ে জামায়াত কোন প্রতিবাদ জানায়নি। তারা অপেক্ষায় রয়েছে গোলাম আযমের রায়ের। এ রায় যাই হোক না কেন তবু তারা হিংসাত্মক কার্যক্রম চালাবে। কারণ কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। কামারুজ্জামানের রায় আর গোলাম আযমের রায় একসঙ্গে মিলিয়ে তাদের রোড়ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই রোড়ম্যাপ বেশ কয়েকদিন আগেই করেছে। জামায়াত-শিবিরের ফোনালাপ থেকে রোড়ম্যাপ সম্পর্কে জেনেছে। বিভিন্ন জেলায় সংস্থাটি বেশকিছু প্রশিক্ষিত জামায়াত-শিবির কর্মীর একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা সরকারের ওপর মহলে পাঠিয়েছে।
সংস্থাটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি জেলায় জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকার পুলিশ নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ২৫ থেকে ৩০ জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের ছয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের হালিশহর, বাকলিয়া, ডবলমুরিং ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। আটক নেতাকর্মীরা গোলাম আযমের রায়ের পর নৈরাজ্য চালানোর পরিকল্পনা করার সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় তিন হেফাজত নেতা গ্রেফতার হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল ও উলিপুরে শিবির কর্মী রাসেল। সাতক্ষীরায় জামায়াতের প্রচার সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, কালিগঞ্জে জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীসহ সারাদেশে অভিযান চালিয়ে আরও কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে শেষ মুহূর্তে মরণকামড় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে আইনগত উদ্যোগের পাশাপাশি সারাদেশে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তৃণমূল পর্যন্ত প্রস্তুত হয়ে আছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে প্রয়োজন পরিবেশ পরিস্থিতি। আর এমন পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই কারণে অকারণে ঘন ঘন রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করছে জামায়াত।
দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা ৯ দফা কর্মসূচী পালন করছে। জামায়াত-শিবির টানা হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারে। যদিও জামায়াতÑশিবিরের পরিকল্পিত তা-ব ঠেকাতে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে সরকারের ভেতরে আলোচনা চলছে।
সরকারের শেষ সময়ে রাজনীতির মাঠ গরম করতে বিএনপি ব্যর্থ হওয়ায় জামায়াতকে পেছন থেকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপিও প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে। এতে জামায়াত বিভিন্ন কর্মসূচীতে রাষ্ট্রের সম্পদ ও মানুষ হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে সাহস পাচ্ছে। বিএনপির সমর্থন উঠেছে জামায়াতকে দেশের মানুষই প্রতিহত করবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, জামায়াতের সম্প্রতি দেয়া হরতালের প্রতি জনগণের কোন সমর্থন ছিল না। সারাদেশে অফিস আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য, পরিবহন চলাচল থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিল স্বাভাবিক। এই হরতালে বিএনপির কোন সমর্থন ছিল না। বিএনপির সমর্থন থাকলে জামায়াত-শিবির সারাদেশে নৈরাজ্য সৃস্টি করত। এ থেকেই প্রমাণিত হয় জামায়াতের আসল শক্তি হচ্ছে বিএনপি। যদিও বিদেশে তাদের কিছু সুহৃদ রয়েছে। পশ্চিমা সুহৃদের টাকার বিনিময়ে পক্ষে রেখেছে। আর তাদের আসল মিত্র পাকিস্তান। এর বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ তাদের বন্ধু হিসেবে মাঝে মধ্যে বিবৃতি বা পক্ষে কথা বলছে। বিদেশী শক্তি কোন বিষয় না। দেশের ভেতরে বিএনপির শক্তি যদি জামায়াতের হয়ে কাজ না করত তাহলে জামায়াত কোন কর্মসূচীই পালন করতে পারত না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন