মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৩

পহেলা বৈশাখে গণজাগরণের মহাসমাবেশ অযৌক্তিক

যুগান্তর রিপোর্ট
পহেলা বৈশাখের দিনে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণায় সমালোচনা করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা মনে করেন, হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পাল্টা জবাব হিসেবে এ ধরনের কর্মসূচি আহ্বান করা হয়েছে। আর লোক সমাগম দেখাতে পহেলা বৈশাখে কর্মসূচি ডাকা হয়েছে। কেননা, উৎসবপ্রিয় বাঙালি পহেলা বৈশাখসহ যে কোন জাতীয় উৎসবের দিনে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছুটে যান। ওই দিন বলতে গেলে পথে পথে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সেই ঢলকে নিজেদের বলে দেখানোর অপচেষ্টা এটা।

তারা বলেন, শুধু পহেলা বৈশাখেই নয়, পহেলা ফালগুন, একুশে ফেব্র“য়ারি, মহান স্বাধীনতা দিবসের মতো জাতীয় দিনগুলোতে নগরীর বিনোদন পিপাসু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসেন। এমন দিনে কেবল গণজাগরণ মঞ্চই নয়, যে কোন সংগঠনের মহাসমাবেশ ডাকার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বরং যে বা যারা এমন চেষ্টা করবেন, তাদের এমন দিনের আগে বা পরে অথবা একই দিন রাজধানীর অন্যত্র প্রয়োজনে গাজীপুরে মহাসমাবেশ ডেকে নিজেদের জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা করতে পারেন। এটা না করে যা করা হচ্ছে তা অস্বস্তিকর, অযৌক্তিক ও হাস্যকর। এর মধ্যে বিন্দুমাত্র সুস্থতা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি জানি না তারা এসব কী করছেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা সেখানে যাচ্ছেন। একাÍতা প্রকাশ করছেন। সরকার তিন স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে। আপনারা গণমাধ্যমগুলোও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছেন। এগুলোর মাধ্যমে আসলে তাদের মাথায় তুলে নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সবার। সেখানে সাংস্কৃতিক উৎসব হয়। সবার জন্য উš§ুক্ত। সেখানে সাধারণ মানুষ যায়। কিন্তু শাহবাগে তারা কি করে এগুলো করছে। এটা ভয়ংকর অস্বস্তিকর ব্যাপার। একজন মাত্র ব্যক্তি নাকি এসব করছেন। তিনি কার মদদে এসব করছেন। একজনের পক্ষে আসলে এটা করা সম্ভব কিনা, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘পেলে-পুষে রাখা হলেও এ লোকগুলো আসলে সরকারের ক্ষতি করছে। এটা সরকারের বোঝা উচিত।’ তিনি ব্যক্তি ডা. ইমরান এইচ সরকারের বিলাসবহুল জীবনযাপন পদ্ধতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এভাবেÑ ‘তিনি কোন গাড়িতে চড়েন। কোথায় টাকা পান।’
শাহবাগের বর্তমান কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর মধ্যে বিন্দুমাত্র সুস্থতা নেই। স্বাভাবিকতা নেই। ভয়ংকর অসুস্থ প্রবণতা চলছে। দিনের পর দিন দলবলসহ যে কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে, তা এখন দেশবাসীর কাছে অনেকটাই অস্বস্তিকর। এ ব্যাপারে সরকারের নিজের স্বার্থেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অধ্যাপক আহমেদ কতিপয় ব্লগারের ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের সমালোচনা করে বলেন, এদের মুখে যখন ইসলামের বিরুদ্ধে কথা শুনি, তখন ঘেন্না লাগে।
বিশিষ্ট কবি ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে তারা হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি প্রতিহত করেছিল, যার মধ্য দিয়ে তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণ প্রকাশিত হয়ে পড়ে। দেশে যে কোন নাগরিকের সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণজাগরণ মঞ্চ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ক্ষমতাসীনদের ‘ঠেঙারে বাহিনী’র ভূমিকা পালন করেছে, যা খুবই দুঃখজনক। তারা এখন পহেলা বৈশাখে স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশকে নিজেদের সমাবেশ হিসেবে প্রমাণ করার জন্য কর্মসূচি দিয়েছেন, যা হাস্যকর। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে, এরা জনগণ থেকে কত বিচ্ছিন্ন!
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. পিয়াস করিম বলেন, দেশ এখন দ্বিধাবিভক্ত। মুক্তিযুদ্ধ এবং ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বড় কোন দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। প্রকৃত পক্ষে ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ একই চেতনার। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম মহাসমাবেশ করে বিশাল শক্তির জানান দিয়েছে। সব বাধা উপেক্ষা করে মানুষের ঢল নেমেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে। ড. পিয়াস করিম বলেন, হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের কাউন্টার দিতে পহেলা বৈশাখ মহাসমাবেশ ডেকেছে গণজাগরণ মঞ্চ। কিন্তু ওই দিন এমনিতেই শাহবাগে মানুষের ঢল নামে। তিনি বলেন, হতে পারে তাদের সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম হবে। কিন্তু মানুষ ধরে নেবে এরা পহেলা বৈশাখে এসেছে। ফলে সমাবেশটি প্রশ্নবিদ্ধ হবেই।
সাবেক সচিব বদিউর রহমানের মতে, ‘পহেলা বৈশাখ শাহবাগে মহাসমাবেশ দেয়ার মানে হল আরেকজনের জিয়াফতের মধ্যে নিজের আকিকা দেয়া।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন