রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৩

ব্লগ কি ও কেন

ঢাকা: ব্লগারদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি চলছে অভিযোগ করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে আমারব্লগডটকম। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ ব্যাখ্যা দেয়।

ব্লগ যে মূলত ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত দিনলিপি তারই বিষদ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বিবৃতিটিতে। ব্লক কি ও কেন, কিভাবে কাজ করে, কি করে এর মডারেশন বা ফিল্টার হয় ইত্যাদি বিষয়ও বেশ সাবলীয়ভাবে ফুটেছে আমারব্লগ কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যায়। 

     
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯) এর আওতায় ব্লগ পোস্টের নানারকম আচরণও ব্যাখ্যা করেছে তারা।

বিবৃতিতে তারা বলেছে, আজকাল অনেকেই ব্লগ ও ব্লগার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন, যা তাদের অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। ব্লগ মানে হলো অনলাইন ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ডায়রি। আগের দিনে মানুষ কাগজের ড‍ায়রি লিখতো এখন লেখে অনলাইনে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাধারণত দুই ধরনের ব্লগ হয়, একটি সিঙ্গেল ইউজার ব্লগ, অন্যটি মাল্টি ইউজার ব্লগ। সিঙ্গেল ইউজার ব্লগে একজন ব্যবহারকারী লিখে থাকেন, যেখানে অন্য অনলাইন ব্যবহারকারীরা তাদের মন্তব্য করতে পারেন।

মাল্টি ইউজার ব্লগ হচ্ছে একটা সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে কয়েক হাজার থেকে শুরু করে লক্ষ কোটি ব্যবহারকারী তাদের ব্লগ এবং মন্তব্য প্রকাশ করেন। আমারব্লগডটকম একটি মাল্টি ইউজার কমিউনিটি ব্লগ।

বিবৃতিতে তারা জানায়, প্রতিটি ব্লগই নিজস্ব নীতিমালায় চলে। সেখানে কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যে কোন ধরনের ব্যক্তি আক্রমন করা পোস্ট, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতহানা পোস্ট, মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা পোস্ট, মানহানিকর পোস্ট, স্প্যামিং হ্যাকিং ইত্যাদি সাইবার অপরাধ জনিত পোস্ট বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন। আমারব্লগডটকম একমাত্র ব্লগ যারা এর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী যে কোনো প্রচারণা ও প্রকাশনা সাইটটিতে নিষিদ্ধ করেছে। লক্ষ ব্যবহারকারীর একটি ব্লগে কোনভাবেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার মন্তব্য এবং শত শত ব্লগ পোস্ট ফিল্টার করা, মডারেট করা সম্ভব নয়।

আমার ব্লগের পক্ষে বলা হয়, এই বাস্তবিক প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পলিসি থাকে। আমার ব্লগেরও সেই পলিসি রয়েছে যাতে বলা হয়েছে, "এই ব্লগের কোন লেখা, কমেন্ট বা কন্টেন্টের স্বত্ত্ব সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ব্লগারের।" ব্লগ কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান কোন ভাবেই কোন ব্লগারের ব্যক্তিগত লেখার দায় বহন করে না। ডায়রির কোন লেখার জন্য ডায়রি প্রস্তুতকারক বা বিক্রেতা দায়ী হয় না। বাংলাদেশের আইনেও কোন ব্যবহারকারীর করা অজ্ঞাত অপরাধের জন্য সাইট পরিচালকদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোন কারণ না দর্শিয়ে স্বৈরাচারীভাবে বাংলাদেশে আমারব্লগডটকম বন্ধ করে দিতে আই আই জি গুলোকে বিটিআরসি চিঠি দেয় তা আদতে ন্যায় বিচার নয়, দুরভিসন্ধিমুলক। উল্লেখ্য, অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখিতে আমারব্লগের রয়েছে সর্ববৃহৎ আর্কাইভ।

এবার আসি মডারেশ সম্বন্ধে, ফেসবুকে কি কোন ধরনের মডারেশন হয়? নিঃসন্দেহে হয় না। প্রতিটি ব্লগ পোস্ট মডারেশনের উদ্ভট চিন্তা কেবল এই প্রযুক্তি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। কোন সভ্য মিডিয়ায় মডারেশন চলতে পারে না। কেবল আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক পোস্ট, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভিত্তিতে ফিল্টার হতে পারে। ফেসবুকেও তেমনিভাবে রিপোর্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে। বিটিআরসির প্রথম ই-মেইলের জবাবে আমরা সেই সহযোগিতা করার কথা বলেছি।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক এবং পুলিশের (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অতিরিক্ত ডিআইজিকে নিয়ে সরকার ফেসবুক ও ব্লগে ইসলাম ও হযরত মুহম্মদকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যকারীদের শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নয় সদস্যের কমিটি করেছেন, যা আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। মজার বিষয় হলো এই বিষয়টি যে মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত সেই "তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের" কোন প্রতিনিধি এই কমিটিতে নেই। অথচ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ব্লগারদের বিচারের কথা বলা হয়েছে। হাস্যকরভাবে সন্ত্রাস বিরোধী আইনেও বিচারে কথা বলা হচ্ছে।

বিবৃতিতে ব্লগ কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯, (সংশোধন ২০১২) সংজ্ঞায় এ ধরনের কোন অপরাধের বিবরণ বা শাস্তির বিধানের কথা উল্লেখ নেই। তবে, কাউকে যদি শাস্তি দেওয়া হবে বলে রাষ্ট্রযন্ত্র মনে করেন, তবে তা আইন করে হলেও দেওয়া যাবে। যদিও সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, তবুও আমাদের নীতিনির্ধারকরা সেটার থোড়াই কেয়ার করেন!

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯)

এই আইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,

২৷ বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থি কিছু না থাকিলে, এই আইনে-

২।(২১) “নিয়ন্ত্রক” বা “উপ-নিয়ন্ত্রক” বা “সহকারী নিয়ন্ত্রক” অর্থ ধারা ১৮(১) এর অধীন নিযুক্ত নিয়ন্ত্রক, উপ-নিয়ন্ত্রক বা সহকারী নিয়ন্ত্রক;

নিয়ন্ত্রক কারা হবেন তা বলা হয়েছে ১৮(১) এ,

১৮। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, সরকারি গেজেটে এবং তদতিরিক্ত ঐচ্ছিকভাবে ইলেকট্রনিক গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে, একজন নিয়ন্ত্রক এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপ-নিয়ন্ত্রক ও সহকারি নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ প্রজ্ঞাপনের মেয়াদ প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হইতে এক বৎসরের অধিক হইবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিটিআরসি (Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission)। ওনারা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন করবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রক এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপ-নিয়ন্ত্রক ও সহকারী নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করবে এবং সেই অনুযায়ীই আইনের প্রয়োগ হবে।

আমরা যতটুকু বুঝি, আইন অনুযায়ী বিটিআরসির কোন এখতিয়ারই নেই কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রনে নোটিশ দেওয়ার বা তথ্য চাওয়ার। (জানার ভুল থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে বিটিআরসিকে যে কোন নোটিশ দেওয়ার কমপক্ষে একবছর আগের একটি নিয়ন্ত্রক কমিটির নিয়োগের বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে, যা তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনগণের অধিকার)।

আপনি ফেসবুক রিপোর্ট করলে তারা সেই অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু, কোন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য কখনই তারা আপনাকে দেবে না। আমারব্লগ যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যা যুক্তরাজ্যের আইন মেনে পরিচালনা করতে হয়। তবে আমারব্লগ যেহেতু বাংলাদেশি এবং বাংলা ভাষাভাষীদের ব্লগ তাই বাংলাদেশের আইনের প্রতিও আমারব্লগ শ্রদ্ধাশীল। তাই আইন সম্পর্কিত যে কোন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আমারব্লগ সাহায্য করতে সদা প্রস্তুত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও অন্যান্য অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে আমারব্লগ কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক কারণে যে কোন উস্কানিমূলক লেখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে, যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী আমারব্লগ কোন ভাবেই ব্লগারদের ব্যক্তিগত তথ্য কারও কাছেই কখনও প্রকাশ করবে না।

এ পরিস্থিতিতে ব্লগারদের নিয়ে নোংরা রাজনৈতিক খেলা শুরু হয়েছে। অন্যায়ভাবে ব্লগারদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আইন লঙ্ঘন করে যেভাবে তাদের মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, দেখে মনে হয়েছে কোন মার্ডার কেসের আসামি। সরকার জানিয়েছে যে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ তাদের যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তা আইসিটি আইনে পড়ে। আইনমন্ত্রী মহোদয়ও সেই আইনেই বিচার করবেন বলে উল্লেখ করেছেন। একটা প্রশ্ন এখানে এসে যায়, যেখানে আইসিটি আইনের ৮০ ধারায় বলা হয়েছে,

"৮০৷ এই আইনের অধীন গৃহীত কোন অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রক, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা সাব-ইন্সপেক্টরের নিম্নে নহেন এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার যদি এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোন প্রকাশ্য স্থানে এই আইনের পরিপন্থি কোন কার্য হইয়াছে বা হইতেছে অথবা এই আইনের অধীন দণ্ডণীয় কোন অপরাধ সংগঠিত হইয়াছে, তাহা হইলে অনুরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া তিনি উক্ত স্থানে প্রবেশ করিয়া তল্লাশী করিতে পারিবেন এবং সংশ্লিষ্ট যে কোন বস্তু আটক করিতে পারিবেন এবং সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি বা অপরাধীকে গ্রেফতার করিতে পারিবেন৷"

এই আইনের অধীনে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে সন্দেহ হলে তল্লাশী, গ্রেফতার করতে আগে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে হবে, সেখানে কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়াই ব্লগারদের যে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হলো তা ম্যালাফাইডি এবং উদ্দেশ্যমুলক। বিজ্ঞ আদালত এরইমধ্যে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। প্রশ্ন হলো-এতটাই দুর্ধর্ষ অপরাধ তারা করেছেন যে, ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত করতে হবে? ব্লগারদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং এই অশুভ তৎপরতায় আমরা বাকরুদ্ধ! নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। অবিলম্বে আমরা মৌলবাদী রাজনীতির বলি সব ব্লগারের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

ব্লগ-ফেসবুকে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী। প্রায় সব ব্লগের প্রাইভেসি পলিসিতে বলা আছে, যে লেখার স্বত্ত্ব সম্পূর্ণ রূপে লেখক বা ব্লগারের। ফেসবুকের অপব্যবহারের জন্য বা ফেসবুকে কোন ইসলামবিরোধী লেখার জন্য নিশ্চয়ই সরকার মার্ক জুকারবার্গকে সমন করবেন না। আমারব্লগের পরিচালকরা যেহেতু যুক্তরাজ্য নিবাসী, তাই আগ্রহ থাকা সত্যেও আমারব্লগের কোন প্রতিনিধি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে পারছে না, এজন্য আমারব্লগ দুঃখ প্রকাশ করছে। আমারব্লগ অন্যসব কমিউনিটি ব্লগের মতই সরকারের যে কোন যৌক্তিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে নির্যাতনের পথ পরিহার করে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন