বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

ওরা হেফাজতে জামায়াত

সহিংসতা ও নৈরাজ্যে উদ্বেগ
ইসলামী দলগুলোর
হরতালের নামে সাম্প্রতিককালে দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা ও নৈরাজ্যের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। গতকাল মঙ্গলবার পৃথকভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফেৎনা প্রতিরোধ কমিটি ও আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত বাংলাদেশসহ ইসলামী দলগুলোর নেতারা তাঁদের এ উদ্বেগের কথা জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, হত্যা ও নৈরাজ্যের ঘটনায় দেশবাসী চরম আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। গতকাল রাজধানীতে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, হরতাল দমনের নামে মানুষ খুন, হরতালের নামে গাড়ি-ট্রেন ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও কি দেশ ধ্বংসের আলামত নয়? তিনি এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সর্বস্তরের জনতাকে আহবান জানিয়ে বলেন, উভয় পক্ষকেই অবিলম্বে এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ দেশ ধ্বংসের জন্য রাজনীতি নয়। রাষ্ট্র ও মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ফেৎনা প্রতিরোধ কমিটি : মুফতি মাসুম বিল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফেৎনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় আলেম ওলামারা বলেছেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে চায়। এ জন্য হরতাল অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। বক্তারা বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আলেম-ওলামাদের এগিয়ে আসতে হবে।
'হেফাজতে ইসলাম নয়, হেফাজতে জামায়াত' : আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, লংমার্চ নাস্তিকতাবিরোধী কর্মসূচি নয় বরং কমিউনিস্টবাদ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি। তিনি বলেন, 'ওরা হেফাজতে ইসলাম নয়, হেফাজতে জামায়াত।' তিনি আরো বলেন, 'হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা মূলত জামায়াতের দ্বারা প্রভাবিত। তা না হলে মুষ্টিমেয় নাস্তিক ব্লগারদের বিরোধিতা ছাড়া দেশে সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, বেপর্দা, বেহায়াপনাসহ যাবতীয় অনৈসলামিক কাজের বিরুদ্ধে কেন হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মসূচি নেই? আল্লামা মাহবুব আরো বলেন, 'ইসলাম হেফাজতের মালিক কোনো মানুষ নয় বরং মহান আল্লাহ পাক ইসলামের হেফাজতকারী।'
চট্টগ্রামে আলেম-ওলামা সমাবেশ : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ইসলাম ও স্বাধীনতা সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে গতকাল বিকেলে নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ফরিদ উদ্দীন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীরে কামেল আল্লামা সাইফুর রহমান নিজামী বলেন, 'হরতাল, লংমার্চ এসব বন্ধ করতে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্তকারী হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াত-শিবিরসহ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যারা আছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা যত দ্রুত সম্ভব নিতে হবে।'
সমাবেশে বক্তব্য দেন আল্লামা সাখাওয়াত হোসেন, আল্লামা ইলিয়াছ রেজভী, আজিজুল হক আলকাদেরী প্রমুখ।
হক্কানী আলেমসমাজ : লংমার্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য হেফাজতে ইসলামের প্রতি আহবান জানিয়েছে সচেতন হক্কানী আলেমসমাজ। গতকাল ১০১ জন আলেমের স্বাক্ষরসংবলিত সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের কাঁধে ভর করে চিহ্নিত অপশক্তি, দেশবিরোধী চক্র গণতান্ত্রিক কর্মসূচির নামে তাদের আসল চেহারা তুলে ধরেছে। ওলামা-মাশায়েখদের শান্তিপূর্ণ লংমার্চ কর্মসূচিকে ঘিরে এই অপশক্তি মওদুদী মতবাদবিরোধী বরেণ্য হক্কানী আলেমদের হত্যাসহ ব্যাপক নাশকতার চক্রান্ত করছে। ইতিমধ্যে হেফাজতে ইসলামের ভেতর জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন