‘শহীদ’ অথবা ‘গাজী’ হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নিষ্পাপ মাদ্রাসা ছাত্রদের নামানো হয়েছে রাস্তায়
জনকণ্ঠ, শংকর কুমার দে ॥ মোহাম্মদ বশির মিয়া। বয়স আট কি দশ হবে।
মিজমিজির কওমী মাদ্রাসার ছাত্র। পরনে পাঞ্জাবি, লুঙ্গি। মাথায় টুপি। এইটুকু
শিশুর হাতে গজারির লাঠি। হেফাজতের হরতালের মিছিলে অংশ নিতে রাস্তায় নেমে
আসতে বাধ্য করা হয়েছে ফুলের মতো এই নিষ্পাপ শিশুটিকেও। সেøাগান দিচ্ছে, ‘১৩
দফা দাবি মানতে হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে’। হেফাজতের ১৩ দফা কি? প্রশ্ন
করতেই তার উত্তর সে জানে না। শুধু তার বয়সী শিশু-কিশোরই নয়, অনেক মাওলানা,
মৌলভী, হুজুরদেরও জানা নেই ১৩ দফা কি?
সোমবার সকাল দশটা। গন্তব্য নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা। রাস্তায় বের হয়েই বাধা। রিকশার দিকে তেড়ে এসেছে হরতালকারীরা। হাতে গজারি, বাঁশের লাঠি। টগবগে রক্তের উল্লাসে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি। বাজছে হুইসেল। হাতের সামনে রিকশা, গাড়ি, দোকানপাট যা পাচ্ছে তা-ই ভাঙ্গার জন্য হাত-পা ছুড়ছে। রিকশা থেকে নেমে পড়ে স্থানীয় এক ফটোসাংবাদিকের সহায়তায় রওনা দিলাম। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে চাষাঢ়া, শিবু মার্কেট, জালকুড়ি, ভুঁইঘর, মেডিক্যাল, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, কুতুবখালী, যাত্রাবাড়ী সবখানে একই দৃশ্য।
পাঞ্জাবি, টুপি পরা মাওলানা, হুজুর, মৌলভী ও তাঁদের ছাত্রদের যাদের হাতে থাকার কথা কোরান, হাদিস- তাঁদের হাতে দেখা গেছে গজারি ও বাঁশের লাঠি। মুখে থাকার কথা ধর্মের বাণী আর বয়ান- তাঁদের মুখে শোনা গেছে জিহাদী স্লোগান। ‘জিহাদ-জিহাদ, জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই’। ‘১৩ দফা দাবি মানতে হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে’। ‘শাহবাগের আস্তানা, গুঁড়িয়ে দাও’। ‘গুঁড়িয়ে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, নাস্তিকদের আস্তানা’। ‘পশ্চিমা দালালরা, হুঁশিয়ার, সাবধান’। ইত্যাদি সেøাগান।
সোমবার সকাল দশটায় বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের পথে পথে পাঞ্জাবি, টুপি পরিহিত মাওলানা-মৌলভীদের হাতে বাঁশের ও গজারির লাঠি নিয়ে জিহাদী মিছিল করার দৃশ্য অনেক ফটো সাংবাদিককেও ক্যামেরাবন্দী করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে বিদেশী সাংবাদিকদেরও এসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে দেখে অনেকেই আতঙ্ক ও উদ্বেগের কথা জানালেন। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছে এই ধরনের চিত্রায়িত ছবি পৌঁছলে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আলাপ হলো বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনিও ঢাকার পথে যাত্রী। হরতাল আহ্বানকারীদের গজারি আর বাঁশের লাঠির রণহুঙ্কারে রাস্তা যানবাহনশূন্য। পাঞ্জাবি, টুপি পরিহিত হুজুরদের আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে বললেন, দেশটা বোধহয় আরও পিছিয়ে যাবে। তালেবানী দেশ হয়ে যাবে। হুজুরদের লাঠিসোটা হাতে রাস্তায় সন্ত্রাসী স্টাইলের ছবি যদি বিদেশীরা দেখেন তাহলে আমাদেরকে আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে ছাড়বেন। এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলা শেষ করে নিজে থেকেই আবার বললেন, ‘মাইন্ড করবেন না ভাই’।
ভুইঘর এলাকার কওমী মাদ্রাসার মাওলানা কাজেম আলীর সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি জানান, সোমবার ফজরের নামাজ পড়েই কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন তাঁরা। হরতাল সফল করতে হবে। হরতাল করছেন কেন? প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তর দিলেন, আমাদের ১৩ দফা দাবি মানতে হবে। ১৩ দফা দাবি কি? জিজ্ঞেস করতেই তিনি উত্তর দিলেন, হেফাজত নেতারা বলতে পারবেন। আপনি জানেন? না, আমি জানি না। এই কথা বললেন কওমী মাদ্রাসার মাওলানা কাজেম আলী।
যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকায় আলাপ হলো কওমী মাদ্রাসার ছাত্র আঃ হামিদ মোল্লার সঙ্গে। বয়স তার বিশের কোঠায়। সাদা কাপড়ের পাঞ্জাবি ও মাথায় কারুকাজ করা টুপি। হরতালের রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ভাংচুর ও প্রতিরোধ করার জন্য হাতে তাঁর গজারির লাঠি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হাতে গজারির লাঠি কেন? জিজ্ঞেস করতেই তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন কোন পত্রিকার সাংবাদিক? তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এবার নরম সুরে জানতে চাইলাম, আচ্ছা যদি পুলিশ গুলি করে? হামিদ মোল্লার উত্তর, হুজুর বলেছেন, ‘মরবি নইলে মারবি’। মরলে শহীদের দরজা খোলা। আর মারলে দুনিয়ার গাজী। বেশি কথা না বাড়িয়ে তিনি রাস্তায় দাঁড়ানো অসংখ্য মাওলানা, মৌলভী, হুজুরদের সঙ্গে মিশে গেলেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে মাথায় হেলমেট পরে, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট লাগিয়ে, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে আছেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হেফাজতে ইসলাম হরতালের নামে রাস্তায় নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার তা-ব চালিয়েছে এটা সত্য। কিন্তু আমাদেরকে এতসব ঘটনার মধ্যেও চরম ধৈর্য ও সহ্যের পরিচয় প্রদর্শন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণে পুলিশ সদস্যরা বড় ধরনের এ্যাকশনে যায়নি।
সোমবার সকাল দশটা। গন্তব্য নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা। রাস্তায় বের হয়েই বাধা। রিকশার দিকে তেড়ে এসেছে হরতালকারীরা। হাতে গজারি, বাঁশের লাঠি। টগবগে রক্তের উল্লাসে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি। বাজছে হুইসেল। হাতের সামনে রিকশা, গাড়ি, দোকানপাট যা পাচ্ছে তা-ই ভাঙ্গার জন্য হাত-পা ছুড়ছে। রিকশা থেকে নেমে পড়ে স্থানীয় এক ফটোসাংবাদিকের সহায়তায় রওনা দিলাম। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে চাষাঢ়া, শিবু মার্কেট, জালকুড়ি, ভুঁইঘর, মেডিক্যাল, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, কুতুবখালী, যাত্রাবাড়ী সবখানে একই দৃশ্য।
পাঞ্জাবি, টুপি পরা মাওলানা, হুজুর, মৌলভী ও তাঁদের ছাত্রদের যাদের হাতে থাকার কথা কোরান, হাদিস- তাঁদের হাতে দেখা গেছে গজারি ও বাঁশের লাঠি। মুখে থাকার কথা ধর্মের বাণী আর বয়ান- তাঁদের মুখে শোনা গেছে জিহাদী স্লোগান। ‘জিহাদ-জিহাদ, জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই’। ‘১৩ দফা দাবি মানতে হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে’। ‘শাহবাগের আস্তানা, গুঁড়িয়ে দাও’। ‘গুঁড়িয়ে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, নাস্তিকদের আস্তানা’। ‘পশ্চিমা দালালরা, হুঁশিয়ার, সাবধান’। ইত্যাদি সেøাগান।
সোমবার সকাল দশটায় বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের পথে পথে পাঞ্জাবি, টুপি পরিহিত মাওলানা-মৌলভীদের হাতে বাঁশের ও গজারির লাঠি নিয়ে জিহাদী মিছিল করার দৃশ্য অনেক ফটো সাংবাদিককেও ক্যামেরাবন্দী করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে বিদেশী সাংবাদিকদেরও এসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে দেখে অনেকেই আতঙ্ক ও উদ্বেগের কথা জানালেন। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছে এই ধরনের চিত্রায়িত ছবি পৌঁছলে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আলাপ হলো বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনিও ঢাকার পথে যাত্রী। হরতাল আহ্বানকারীদের গজারি আর বাঁশের লাঠির রণহুঙ্কারে রাস্তা যানবাহনশূন্য। পাঞ্জাবি, টুপি পরিহিত হুজুরদের আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে বললেন, দেশটা বোধহয় আরও পিছিয়ে যাবে। তালেবানী দেশ হয়ে যাবে। হুজুরদের লাঠিসোটা হাতে রাস্তায় সন্ত্রাসী স্টাইলের ছবি যদি বিদেশীরা দেখেন তাহলে আমাদেরকে আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করে ছাড়বেন। এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলা শেষ করে নিজে থেকেই আবার বললেন, ‘মাইন্ড করবেন না ভাই’।
ভুইঘর এলাকার কওমী মাদ্রাসার মাওলানা কাজেম আলীর সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি জানান, সোমবার ফজরের নামাজ পড়েই কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন তাঁরা। হরতাল সফল করতে হবে। হরতাল করছেন কেন? প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তর দিলেন, আমাদের ১৩ দফা দাবি মানতে হবে। ১৩ দফা দাবি কি? জিজ্ঞেস করতেই তিনি উত্তর দিলেন, হেফাজত নেতারা বলতে পারবেন। আপনি জানেন? না, আমি জানি না। এই কথা বললেন কওমী মাদ্রাসার মাওলানা কাজেম আলী।
যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকায় আলাপ হলো কওমী মাদ্রাসার ছাত্র আঃ হামিদ মোল্লার সঙ্গে। বয়স তার বিশের কোঠায়। সাদা কাপড়ের পাঞ্জাবি ও মাথায় কারুকাজ করা টুপি। হরতালের রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ভাংচুর ও প্রতিরোধ করার জন্য হাতে তাঁর গজারির লাঠি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হাতে গজারির লাঠি কেন? জিজ্ঞেস করতেই তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন কোন পত্রিকার সাংবাদিক? তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এবার নরম সুরে জানতে চাইলাম, আচ্ছা যদি পুলিশ গুলি করে? হামিদ মোল্লার উত্তর, হুজুর বলেছেন, ‘মরবি নইলে মারবি’। মরলে শহীদের দরজা খোলা। আর মারলে দুনিয়ার গাজী। বেশি কথা না বাড়িয়ে তিনি রাস্তায় দাঁড়ানো অসংখ্য মাওলানা, মৌলভী, হুজুরদের সঙ্গে মিশে গেলেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে মাথায় হেলমেট পরে, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট লাগিয়ে, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে আছেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হেফাজতে ইসলাম হরতালের নামে রাস্তায় নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার তা-ব চালিয়েছে এটা সত্য। কিন্তু আমাদেরকে এতসব ঘটনার মধ্যেও চরম ধৈর্য ও সহ্যের পরিচয় প্রদর্শন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণে পুলিশ সদস্যরা বড় ধরনের এ্যাকশনে যায়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন