রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৩

রায়কে কেন্দ্র করে আবারো নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত-শিবির

আরো দু'টি রায় আসছে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে। আর আসন্ন এ দুই রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশে আবারো নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। রায়ের দিন থেকেই একটানা দুই-তিনদিন হরতাল দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। খবর বাংলানিউজ

প্রসঙ্গত, সব বিচারিক কাজ শেষে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায়কে অপেক্ষমাণ রেখেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশে গড়ে উঠা আন্দোলনকে সরকার নানামুখী তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণ করার পর আবারো আন্দোলন জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে জামায়াত। এ লক্ষ্যে রায়ের দিন থেকে হরতাল দেয়াসহ নানাভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা অাঁটছে স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি।
এক্ষেত্রে সাঈদীকে নিয়ে অপপ্রচারের মতো ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনাও আছে তাদের। কারণ, তারা জানে সাঈদীর মতো গোলাম আযম ও কামারুজ্জামানের ব্যক্তিগত কোনো ইমেজ নেই। তাই তারা সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামবিরোধী নানা অপ্রচার চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষদের আবারো রাস্তায় নামানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এ কাজে হেফাজতকেও ব্যবহার করতে পারে তারা।
জামায়াত-শিবির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারো তারা ঢাকার বাইরে জেলাগুলো থেকে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করবে। এর ফলাফল দেখে ঢাকার প্রস্তুতির কথা ভাববে।
জামায়াত সূত্র বলছে, সাঈদীর রায়ের পর যে কয়টি জেলায় তাদের শক্তি প্রদর্শন হয়েছে সে জেলাগুলো ছাড়াও যেসব জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল সে জেলাগুলোতে তারা নতুন করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করবে।
সূত্র আরো বলছে, তাদের ঘরোয়া লোকদের দিয়ে কোন জেলার পুলিশ বা প্রশাসনের শক্তি কতটুকু সে তথ্য তাদের হাতে এসেছে। এ নিয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। সেখানে রায় পরবর্তী করণীয় নিয়েও তাদের অবহিত করা হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল হালিম বলেন, আমরা কোনো অপ্রচার চালিয়ে মানুষকে রাস্তায় নামাইনি। আমাদের নেতাদের ইমেজের কারণে তাদের মানুষের বিশ্বাস ও ভালবাসার কারণে জনতা রাস্তায় নেমেছে। এবারো যদি তা হয় এর দায় সরকারের। কারণ, সরকার জামায়াতকে ধ্বংস করার জন্য মিথ্যা মামলায় নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দিচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সাঈদীর রায়ের পর বগুড়া এবং সামপ্রতিক ফটিকছড়িতে যেভাবে মিথ্যা প্ররোচনা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে আবারো মাস্টারমাইন্ড গোলাম আযম ও কামারুজ্জামানের রায়কে কেন্দ্র করে একই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও থানার ওসিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ কমিটির প্রথম বৈঠক বসে। বড় ধরনের নাশকতা দমনে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি থেকে প্রথমবারের মতো 'ক্রাইসিস লেবেল' (আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হলে এর মাত্রা নির্ধারণী সতর্কতা) নির্ধারণ করারও কমিটি গঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কোথাও বড় ধরনের কোনো নাশকতামূলক হামলা বা দুর্ঘটনা ঘটানোর পর তা মোকাবেলায় কত দ্রুত সরকারের সংশ্লিষ্ট সবক'টি সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ লাগানোর যায় সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও এরই মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে আইনের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীও সতর্ক অবস্থান নেবে। এ বিষয়ে দলটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিটি জেলা-উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে করে পরবর্তী রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির আবারো কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে। রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াতের দেয়া সব কর্মসূচিতে তাদের মাঠে থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জামায়াত অধ্যুষিত জেলাগুলোতে তাদেরকে কঠোর অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
তবে এ বিষয়ে এখন দলের বাইরে কথা বলতে নারাজ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চান না। চলতি সপ্তাহে পটুয়াখালী তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ফটিকছড়ির মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটতে পারে সেজন্য দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে জামায়াত-শিবিরের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাক থাকার জন্যও নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন