সমকাল, বিশেষ প্রতিনিধি
মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান, ফটোশপে ছবির বিকৃতি, ছবির ভুয়া ক্যাপশন সংযুক্তি, বিভ্রান্তিকর স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে ধর্মান্ধতাকে উস্কে দিয়ে চলছে অপপ্রচার। এভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের সাইবার প্রচারণা নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অপব্যবহার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান, ফটোশপে ছবির বিকৃতি, ছবির ভুয়া ক্যাপশন সংযুক্তি, বিভ্রান্তিকর স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে ধর্মান্ধতাকে উস্কে দিয়ে চলছে অপপ্রচার। এভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের সাইবার প্রচারণা নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অপব্যবহার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ইসলাম ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননাকর কিংবা সাম্প্রদায়িক উস্কানিবিষয়ক ইন্টারনেট সাইটের বিষয়ে অনুসন্ধান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাঈনুদ্দিন খন্দকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে মাঈনুদ্দিন খন্দকার গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, যে সব ব্লগে ধর্ম অবমাননা কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মতো পোস্ট কিংবা মতামত প্রকাশ পেয়েছে, যারা ভুয়া ছবি সংযুক্ত করছে তাদের শনাক্ত করা হবে।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার গতকাল রোববার এ সম্পর্কে বিস্তারিত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ (চাদর) বদল করা সৌদি আরবে নিয়মিত ঐতিহ্যবাহী একটি অনুষ্ঠান। সেখানে বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ যোগদান করে থাকেন। সাইবার দুনিয়ায় এমন ছবি সহজেই পাওয়া যায়। এই অনুষ্ঠানের ছবির ক্যাপশন বদল করে এবার একে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে উল্লেখ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা ক্যাপশন দিয়ে এই ছবি আবার বিএনপি-জামায়াত সমর্থক কিংবা তাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত কোনো কোনো সংবাদপত্র ছেপেছে। এই ছবির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিভ্রান্তিকর খবর। ওই বাংলা দৈনিক অনলাইন সংস্করণ থেকে পরে সংবাদটি প্রত্যাহার করলেও বিভ্রান্তিকর তথ্যের জন্য পাঠকের কাছে ক্ষমা চায়নি।
গত সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের রামুতে ফেসবুকে এক বৌদ্ধ যুবকের ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইসলাম ধর্মের অবমাননাকর একটি ছবি ট্যাগ করে দিয়ে সেখানে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল। একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা চালিয়ে বৌদ্ধমন্দির ভাংচুর ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘরে হামলা চালায়। সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনার সঙ্গেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক পোস্টকে কেউ কেউ দায়ী করেন। ইন্টারনেটে ক্ষতিকর মন্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবের। তিনি গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, এ ধরনের প্রবণতা প্রতিরোধে কনটেন্ট বন্ধ করে দিয়ে পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয়। একটা কনটেন্ট বন্ধ করলে ভিন্ন নামে শত শত কনটেন্ট দেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই প্রতিরোধের বড় উপায়। সুমন আহমেদ সাবেরের মতে, কোনো বিষয়ে ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হলে তার বিপরীতে সত্য তথ্য কী সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ কিংবা দায়িত্বশীল কেউ জাতিকে জানাতে পারেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উইকিলিকসের মতো মাধ্যম বন্ধ করতে পারেনি। গত বছরের ডিসেম্বরে তুরস্কে একটি আন্দোলনের ছবির নিচে 'যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী এবং জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে' বলে ছবি প্রকাশ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তুরস্কের একটি ওয়েবসাইটে একই ছবির ক্যাপশন ছিল 'প্রফেটস অব লাভ র্যালি'। দেখা যাচ্ছে, এখানেও যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী বলে যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে তা ছিল অসত্য।
গত বছরের ডিসেম্বরে অপর একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়, 'সাঈদীর মুক্তির দাবিতে তেহরানে হাজার হাজার নারীর বিক্ষোভ'। অস্ট্রেলিয়ার 'ডেইলি লাইফ' ওয়েবসাইটে একই ছবিতে দেখা যায়, 'শান্তি ও সহাবস্থানের দাবিতে সিডনিতে মুসলমান নারীদের বিক্ষোভ'। ফেসবুকে 'সেভ রোহিঙ্গা মুসলিমস অব মিয়ানমার (বার্মা)' নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে 'সাইবার গ্রুপ অব বাংলাদেশ' নামে অন্য একটি অ্যাকাউন্টের ছবি শেয়ার করা হয়েছে। ছবিতে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়, 'স্টপ কিলিং মুসলিমস ইন বার্মা... প্লিজ শেয়ার উইথ ফ্রেন্ডস'। আসলে এটি ছিল এএফপির একটি ছবি, যাতে সিরিয়ার একটি শহরে গণকবরের পাশে দাঁড়ানো মানুষ দেখা যাচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা চলার সময় মসজিদে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে টেকনাফের স্থানীয় সংবাদপত্রে ছবি ছাপা হয়। এর প্রতিবাদে তখন ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস যাচাই করে দেখেছে যে, ওই খবরটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গণদাহের ছবিকে ওই সময়ে 'বার্মায় মুসলমান হত্যা' ক্যাপশন দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। চীনের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সফরের প্রতিবাদে ভারতে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে একজন তিব্বতির গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার ছবিকে 'বার্মায় একজন মুসলমানকে পুড়িয়ে হত্যার ছবি তুলছেন একজন সাংবাদিক' ক্যাপশন দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফেসবুকে অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, লাহোরে একজন মোটরসাইকেলে করে বাংলায় লেখা 'আল্লামা সাঈদীর মুক্তি চাই' দাবিতে প্ল্যাকার্ড বহন করছেন। প্রকৃতপক্ষে অন্য ইস্যুতে বহন করা ওই প্ল্যাকার্ডের লেখা ছিল উর্দু ভাষায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন