বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৩

তরুণদের হাতে জয়ের পতাকা

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
আমি কেন আমার মতো জীবন যাপন করতে পারব না? এই জিজ্ঞাসাই মানুষকে সভ্য করে রেখেছে। যে সমস্ত দেশে এই জিজ্ঞাসা নেই সে সমস্ত দেশে জ্ঞান নেই। জ্ঞানবিহীন সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ। নিজের মতো জীবন যাপনের বদলে অন্যের বিশ্বাসের অনুসরণে জীবন যাপন করার চাপ তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে আর এই চাপ তৈরি করছে ধর্মান্ধ কতগুলো সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। ধর্মান্ধতা দিয়ে রাজনৈতিক তত্ত্ব তৈরি করা যায় না। ধর্মান্ধতা দিয়ে রাজনৈতিক সম্পর্কও নির্মাণ করা যায় না। কিন্তু বর্তমানে ধর্মান্ধতা দিয়ে কতগুলো সংগঠন ও রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক তত্ত্ব ও রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর নাম হচ্ছে : হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্র শিবির ও বিএনপি। তারা আনুগত্য ও জবরদস্তির প্রশ্নটি রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সম্পর্কের ভিতর নিয়ে এসেছে। আবার তারা রাজনৈতিক তত্ত্ব ও সম্পর্কের ভিতর আল্লাহ্র অবস্থানকেন্দ্রিক করে তুলেছে। একজন ব্যক্তির জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিংবা একজন ব্যক্তির জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র হস্তক্ষেপ অর্থাৎ এ সমস্ত সংগঠন ও দলের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ জবরদস্তির চরম। যেখানে জবরদস্তি, সেখানে ফ্রিডম থাকে না। আল্লাহ্র নামে ফ্রিডম লুপ্ত করার স্ট্র্যাটেজি মানুষ কখনো, কোন দেশেই গ্রহণ করেনি। ফ্রিডম ছাড়া কোন রাজনৈতিক তত্ত্ব একজন ব্যক্তির সঙ্গে অন্য একজন ব্যক্তির, একজন ব্যক্তির সঙ্গে একদল ব্যক্তির মধ্যে সু-রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে সমর্থ হয় না। জবরদস্তি এভাবে তৈরি হয়, জরবদস্তি দিয়ে সভ্যতা তৈরি করা যায় না। যদি বলা হয়: সভ্য হওয়ার দরকার নেই কিংবা সভ্যতার দরকার নেই, তাহলে মানুষতো পশু হয়ে ওঠে। পশু হওয়া কি মানুষের কপাল। সেদিকেই ঠেলছে ফ্রিডমবিহীন রাজনৈতিকতা। আল্লাহকে ব্যবহার করে বিশেষ সংগঠন ও বিশেষ রাজনীতির প্রতি আনুগত্য তৈরি করা জবরদস্তির নামাত্তর। হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্র শিবির, বিএনপি এ দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির ৪,৫ ও ৭ বিশ্লেষণ করা জরুরী (১৩ দফা জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্র শিবির, বিএনপির বিভিন্ন দাবির অন্য নাম)। এ সব দাবি ব্যক্তি স্বাধীনতাবিরোধী, সংস্কৃতিবিরোধী, শিক্ষাবিরোধী : ধর্মান্ধতা ছড়িয়ে ছড়িয়ে এ সব দাবি তৈরি করা হয়েছে। ৪ দফায় বলা হয়েছে : ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যাভিচার, প্রকাশ্যে নারী, পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। ৫ দফায় বলা হয়েছে ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। ৭ দফায় বলা হয়েছে: মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশবাসী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ -ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা। বাঁচবার জন্য মানুষ কোন দিকে যাবে? ধর্মান্ধতা দিয়ে বাঁচা সম্ভব নয় বলে মানুষ ফ্রিডম বাছাই করেছে।
মানুষ সভ্যতার দিকে লড়াই করে যা কিছু অর্জন করেছে সবকিছুকে বাতিল করে পিছনের দিকে হাঁটবার নির্দেশ দিচ্ছে এ ধরনের রাজনীতি। নির্দেশ দিলেই কি মানুষ সবকিছু মেনে নেয়? মানুষ তা-ই মানে যা তাকে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা দেয়। কুৎসিত ও কদর্যের দিকে যাত্রা করার নির্দেশের রাজনীতি মানুষ মানে না। কখনো মানে না, কোনদিনও মানে না। ধর্মান্ধতাকে পিছনে হটিয়ে দিয়ে মানুষ সভ্যতার দিকে অগ্রসর হয়েছে। যেসব সমাজ ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি ব্যবস্থা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পেরেছে তারা জয়ী হয়েছে, যারা পারেনি তারা হেরেছে, বিভিন্ন অবস্থান থেকে টাকা ভিক্ষা করে ক্যাডার পুষেছে এবং মানুষ মেরেছে। জয়ী সমাজ ব্যবস্থা, জয়ী সংস্কৃতি ব্যবস্থা ধর্মান্ধতাকে হটিয়ে দিয়ে ধর্মের উজ্জ্বলতা বাড়িয়েছে, আর ধর্মান্ধ সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মান্ধ সংস্কৃতি ব্যবস্থা ধর্মকে মলিন করেছে। কুৎসিত করেছে কদর্য করেছে। ধর্মান্ধতা, সেজন্য এক পরাজিত সমাজ ব্যবস্থা, পরাজিত এক সংস্কৃতি ব্যবস্থা, বিতাড়িত এক জীবন ব্যবস্থা, অধিকাংশ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্ধকারে মুখ গুঁজে থাকছে।
এ দেশের মানুষের অগ্রযাত্রা সবসময়, ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে ধর্মান্ধতা উদ্ভূত সমাজ ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থ্য, যে কারণে এই ব্যবস্থা থেকে কোন বিজ্ঞানী তৈরি হয়নি, মহৎ লেখক উদ্ভব হয়নি, জীবনের বিচিত্র বিকাশে কোন অবদার রাখতে পারেনি। গণমাধ্যম কর্মী শারমিনকে পিটিয়ে খালেদা জিয়ার মুখ উজ্জ্বল হয়নি। মুখ উজ্জ্বল হয়নি মাওলানা সফি সাহেবের। বরং প্রমাণিত হয়েছে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র ব্যবস্থার নৃশংস ও নিষ্ঠুর চেহারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত করার যত চক্রান্তই জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র শিবির করুন না কেন তারা পরাজিত হবেই। হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্যহীন যাত্রা কোথাও পৌঁছবে না। কারণ : তরুণদের হাতে জয়ের পতাকা, আর সে পতাকা বাংলাদেশের, আর তরুণরা এদেশের বাসিন্দাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছে। শাহবাগ মঞ্চের সবচেয়ে বড় অবদান : মানুষদের তরুণ করে তোলা। এখানেই হেরে চলেছে জামায়াত, হেফাজত, বিএনপির রাজনীতি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন